প্রশ্নঃ আমাদের সৈয়দপুর সেনানিবাসে গ্যারিসনে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সহ মোট ৪টি জুম‘আ মসজিদ আছে । এক্ষণে মুসল্লি বৃদ্ধির জন্য বাঁকী তিনটি ওয়ক্তিয়া রেখে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কেবল মাত্র একটি জুম‘আ করতে চাই । শরী‘আতে এটি জায়েজ হবে কিনা ।
উত্তরঃ এতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই ; বরং উৎসাহিত করা হয়েছে । কেননা জুম‘আ মসজিদের উদ্দেশ্যই হ’ল জামা‘আত বড় হওয়া । জামা‘আত যত বড় হবে , মুসল্লির নেকী তত বেশী হবে । এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জোরদার হয় এবং পরস্পরে পরিচিতি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় । আর এটাই হ’ল আল্লাহর কাম্য । তিনি বলেন , ‘হে বিশ্বাসীগণ ! যখন জুম‘আর আযান হয় , তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দৌড়ে চলো এবং বেচা-কেনা ছেড়ে দাও । এটাই তোমাদের জন্য উত্তম , যদি তোমরা বুঝ’ (জুম‘আহ-৯) । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন , ‘জামা‘আতে মুসল্লি যত বেশী হবে , আল্লাহর নিকটে তা তত বেশী প্রিয়তর হবে’ (আবু দাউদ , নাসাঈ , মিশকাত হা/১০৬৬ ; ‘জামা‘আত ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৯৯৯ ৩/৬৪ পৃঃ) ।
সম্ভবত এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে মদীনাতে মসজিদে নববীই একমাত্র জুম‘আ মসজিদ ছিল । যদিও তখন মুসল্লির সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল । একবার দূরে অবস্থানকারী বনু সালামাহ গোত্র মসজিদে নববীর কাছাকাছি এসে বাড়ী করার আকাংখা ব্যক্ত করে । তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের বলেন , হে বনু সালামাহ ! তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই থাক । কেননা এতে (দূরত্বের কারণে) মসজিদে আসতে তোমাদের পদক্ষেপ বৃদ্ধি পাবে এবং তোমাদের পদচিহ্ন সমূহ (তোমাদের আমল নামায়) লিখিত হবে’ (মুসলিম , মিশকাত হা/৭০০ ; ‘মসজিদ সমূহ ও সালাতের স্থান সমূহ’ অনুচ্ছেদ ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৬৪৮) । তিনি বলেন , ‘ঐ মুসল্লি সবচেয়ে বেশী সওয়াবের অধীকারী হবে , যে সবচেয়ে দূরে থেকে মসজিদে আসে এবং ঐ মুসল্লি অধিক পুরস্কৃত হবে , যে আগে মসজিদে আসে এবং অপেক্ষা করে । অতঃপর ইমামের সাথে সালাত আদায় করে’ (মুত্তাফক্ব আলাইহ , মিশকাত হা/৬৯৯ ; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৬৪৭) ।
এমনকি দূরের বাসিন্দা অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম কেও আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মসজিদে জামা‘আতে না আসার ব্যাপারে অনুমতি দেননি (মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনু মাজাহ , মিশকাত হা/১০৫৪ , ১০৭৮) । রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন , এক ইমামের অধীনে দুইজনের জামা‘আত আল্লাহর নিকট অধিক নেকী বর্ধক বিচ্ছিন্ন চারজন মুসল্লির চাইতে । অনুরুপভাবে চারজনের জামা‘আত আটজন বিচ্ছিন্ন মুসল্লির চাইতে এবং আটজনের জামা‘আত একশ’ জন বিচ্ছিন্ন মুসল্লির চাইতে বেশী নেকী বর্ধক’ (ত্বাবারানী , বাযযার , সহীহ তারগীব হা/৪১২) । ছাহেবে মির‘আত বলেন , এ হাদীসে প্রতিবাদ রয়েছে ঐসব লোকের , যারা বলেন যে , সকল জামা‘আতের নেকী সমান । অথচ ২৭ গুণ নেকী বেশী হওয়ার হাদীস তার চাইতে বেশী নেকী হওয়ার হাদীসগুলিকে রদ করে না (মির‘আত হা/১০৭৩ – এর ব্যাখ্যা , ৩/৫১০ পৃঃ) ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন