মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সেখানে কিভাবে দেখানো হবে?


প্রশ্ন  : কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সেখানে কিভাবে দেখানো হবে?

উত্তর : সেখানে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখানো হবে বলে কোন প্রমাণ নেই। বরং রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে তার ধারণা ও আক্বীদা কি, প্রশ্নের মাধ্যমে সেটাই যাচাই করা হবে (মির
আতুল মাফাতীহ হা/১৩১-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)

কোন্ দুই ব্যক্তি রাসুল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়াই জান্নাতে যাবে?


প্রশ্নঃ : কোন্ দুই ব্যক্তি রাসুল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়াই জান্নাতে যাবে? তারা দুনিয়াতে কী ধরনের আমল করতেন?

উত্তর : উক্ত মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং দুই শ্রেণীর মানুষ তাঁর শাফা
আত লাভ করতে সক্ষম হবে না মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অত্যাচারী শাসক এবং খিয়ানতকারী ব্যক্তি (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে হা/৩৭৯৮)

পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন্ জাতির আগমন ঘটে?


প্রশ্ন  : পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন্ জাতির আগমন ঘটে? শয়তানের উৎপত্তি কোথা থেকে এবং সে কোন্ জাতির অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর : মানুষ সৃষ্টির পূর্বে পৃথিবীতে জিন জাতির বসবাস ছিল (হিজর ২৭)। তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল (বাক্বারাহ ৩০)। শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে (আ
রাফ ১২) এবং তারা হল জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত (কাহফ ৫০)। আর জিন জাতি আগুন দ্বারা সৃষ্ট (রহমান ১৫)

আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে নূর এসেছে


প্রশ্ন  : সূরা মায়েদার ১৫ আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নূর এসেছে এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। উক্ত নূর দ্বারা মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে নূরের তৈরি সে কথা বুঝানো হয়েছে। এ বক্তব্য কি সঠিক?

উত্তর : উক্ত ব্যাখ্যা সঠিক নয়। কারণ এখানে
নূর দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন শিরকের অন্ধকার হতে মানুষকে তাওহীদের আলোর পথে বের করে আনে। এখানে কিতাবুল মুবীন  (كتابٌ مبينٌ) নূর (نُوْرٌ) -এর উপর عطف بيان হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, তোমাদের নিকট আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে একটি জ্যোতি ও সমুজ্জ্বল গ্রন্থ (মায়েদাহ ১৫)। দুটির অর্থ একই। এর পরের আয়াতেই যার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلاَمِ এর দ্বারা আল্লাহ শান্তির রাস্তাসমূহ প্রদর্শন করেন ঐ ব্যক্তির জন্য, যে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে.. (মায়েদাহ ১৬)। ১৫ আয়াতে বর্ণিত নূরকিতাব যদি দুটি বস্তু হত, তাহলে ১৬ আয়াতে يَهْدِيْ بِهِ না বলে بَهْدِىْ بِهِمَا বলা হত। অর্থাৎ ঐ দুটির মাধ্যমে। যেমন পূর্ববর্তী সূরা নিসা-র শেষদিকে ১৭৪ আয়াতে বলা হয়েছে, হে মানবজাতি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে بُرْهَان (দলীল) এসেছে এবং আমরা তোমাদের উপর নাযিল করেছি نُوْرًا مُبِيْنًا (উজ্জ্বল জ্যোতি)। এখানে বুরহাননূর যে একই বস্ত্ত, তা পরবর্তী আয়াতেই বলে দেওয়া হয়েছে। যেমন,فَأَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا بِاللهِ وَاعْتَصَمُوْا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِيْ رَحْمَةٍ مِّنْهُ অতএব যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং কুরআনকে আঁকড়ে ধরেছে। সত্বর তিনি তাদেরকে তাঁর রহমত ও অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করাবেন (নিসা ১৭৫)। এখানে وَاعْتَصَمُوْا بِهِ বলা হয়েছে, وَاعْتَصَمُوْا بِهِمَا বলা হয়নি। একইভাবে মায়েদা ১৫ আয়াতে নূরকিতাবুম মুবীন অর্থ কুরআন মজীদ। যার মাধ্যমে আল্লাহ ঈমানদারগণকে স্বীয় নির্দেশে অন্ধকার হতে বের করে আলোর দিকে পথ প্রদর্শন করেন (মায়েদাহ ১৬)
কোন কোন বিদ্বান
নূর অর্থ রাসূল (ছাঃ) অথবা ইসলাম বলেছেন। তিনটির সারমর্ম একই। অর্থাৎ যদি কুরআন ও ইসলাম নিয়ে শেষনবীর আগমন না ঘটত, তাহলে মানুষ শিরকের অন্ধকার থেকে তাওহীদের আলোর পথ খুঁজে পেত না (তাফসীরুল মানার)
উল্লেখ্য যে,
اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِى আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর পয়দা করেন বলে যে হাদীছ প্রচলিত আছে তা মওযূ বা জাল (সিলসিলা ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্রঃ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নূরের তৈরী ছিলেন না। বরং আল্লাহ বলেন, হে রাসূল! তুমি বলে দাও যে, আমি তোমাদেরই মত একজন মানুষ... (কাহফ ১১০)

পবিত্র কুরআন মুখস্থ তেলাওয়াত করা


প্রশ্ন  : পবিত্র কুরআন মুখস্থ তেলাওয়াত করা ও দেখে তেলাওয়াত করার মধ্যে ছওয়াবের কোন তারতম্য আছে কি?
 
উত্তর : কোন তারতম্য নেই। কুরআন দেখে পড়া হোক বা মুখস্থ পড়া হোক প্রতি হরফে দশটি করে নেকী হবে (তিরমিযী হা/২৯১০; মিশকাত হা/২১৩৭)। উল্লেখ্য, আমার উম্মতের সর্বোত্তম আমল হল কুরআন দেখে পড়া মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ (যঈফুল জামে
হা/১০৪৮ ও  ৩৯৮০)

রবিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১২

বিশ্ব ইজতেমায় যোগদান করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : বিশ্ব ইজতেমায় যোগদান করা যাবে কি?

উত্তর : ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রচার করার লক্ষ্যে যেকোন মাহফিল বা ইজতেমার আয়োজন করা ও সেখানে যোগদান করা যায়। কিন্তু যদি ইসলামের নামে জাল, যঈফ ও বানোয়াট হাদীছের এবং ভিত্তিহীন ফাযায়েল ও কেচ্ছা-কাহিনী শোনার দাওয়াত দেয়া হয়, বিদআতী আক্বীদা ও আমল প্রচার করা হয়, তাহলে সেখানে যোগদান করা যাবে না। চাই সেটা বিশ্ব ইজতেমা হোক বা অন্য কোন ইজতেমা হোক। কারণ বিদআতীদের সঙ্গ দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বিদআতী লোকেরা ক্বিয়ামতের দিন হাউয কাওছারের পানি পান করতে পারবে না (ছহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩)। উল্লেখ্য যে, তাবলীগ জামাআত কথিত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করে থাকে। আর তাদের মধ্যে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলি অধিকহারে রয়েছে। তারা ছালাত শিখলেও তা কখনোই ছহীহ হাদীছের ছালাত নয়। বিশ্ব ইজতেমায় আখেরী মুনাজাতের বিদআত চালু করে তারা এককভাবে দোআ করার ছহীহ তরীকা থেকে মানুষকে ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ এখন ফরয ছালাত আদায়ের চাইতে আখেরী মুনাজাতে যোগদান করাকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। অতএব এইসব বিদআতী ইজতেমা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

সূরা ইখলাছ একবার পড়লে পবিত্র কুরআন একবার


প্রশ্ন  : সূরা ইখলাছ একবার পড়লে পবিত্র কুরআন একবার খতম করার ছওয়াব পাওয়া যায়। উক্ত মর্মে ছহীহ হাদীছ আছে কি? সূরা ইখলাছের ফযীলত সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর : উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। তবে সূরা ইখলাছ একবার পড়লে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান ছওয়াব হবে মর্মে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (বুখারী হা/৫০১৩; মিশকাত হা/২১২৭)। এছাড়া যে ব্যক্তি দশবার সূরা ইখলাছ পাঠ করবে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করবেন (আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৮৯; ছহীহুল জামে
হা/৬৪৭২)। যে ব্যক্তি সূরা ইখলাছকে পসন্দ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে (তিরমিযী হা/১৯০১; মিশকাত হা/২১৩০)। এর তাৎপর্য হল তাওহীদকে সঠিকভাবে বুঝা ও সে অনুযায়ী আমল করা। উল্লেখ্য যে, সূরা ইখলাছ সম্পর্কে বহু বানোয়াট ও যঈফ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (তিরমিযী, মিশকাত হা/২১৫৮-৫৯)