শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

টিকটিকি মারলে নেকী হয়


প্রশ্ন : জনৈক আলেম বলেন, টিকটিকি মারলে নেকী হয়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? তার অপরাধ কী?

উত্তর: উক্ত বক্তব্য সঠিক। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, প্রথম আঘাতে টিকটিকি মারতে পারলে ১০০ নেকী, দ্বিতীয় আঘাতে তার চেয়ে কম, তৃতীয় আঘাতে মারতে পারলে তার চেয়েও কম নেকী পাবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১২১)। এর কারণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, টিকটিকি ইবরাহীম (আ:)-এর বিরুদ্ধে আগুনে ফুঁক দিয়েছিল (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪১১৯)। উল্লেখ্য, অনেকেই গিরগিটি (কোন কোন এলাকায় কাঁকলাস, ডাহিন, রক্তচোষা বলে) মারতে বলেন। এটা ঠিক নয়। কারণ হাদীছে وزغ শব্দ এসেছে। যার অর্থ টিকটিকি। আর গিরগিটির আরবী হحرباء (আল-মুনজিদ, পৃ: ১২৫; আল-মুজামুল ওয়াসীত্ব দ্র:)।

ভাগ্য পরিবর্তনের দো‘আ


প্রশ্ন : ভাগ্য পরিবর্তনের দোআ হিসাবে আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন জাহদিল বালা-য়ে ওয়া দারকিশ শাক্বা-য়ে ওয়া সূইল ক্বাযা-য়ে পড়া যাবে কি?

উত্তর: উক্ত দোআটি ৪ প্রকার সংকট থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় ভিক্ষার জন্য বলা হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৭)। তন্মধ্যে একটি হসূইল ক্বাযায়ে যার অর্থ মন্দভাগ্য। ভাগ্য বিধাতা আল্লাহ ইচ্ছা করলে ভাগ্যে যেকোন পরিবর্তন আনতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দোআ ব্যতীত (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪৯২৫ শিষ্টাচার অধ্যায় ১৪ অনুচ্ছেদ)।

দ্বীনে হানীফ কাকে বলে?


প্রশ্ন : দ্বীনে হানীফ কাকে বলে? ইবরাহীম (আ:)-এর দ্বীনের নাম কী ছিল? উম্মী বলে কাদেরকে বুঝানো হয়েছে?

উত্তর: যে ব্যক্তি অন্য সব দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে সত্য দ্বীনের দিকে অগ্রসর হয় তাকেই হানীফ বলে। আবার একনিষ্ঠ এবং এক আল্ল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে এমন ব্যক্তিকেও হানীফ বলে। এছাড়া আল্লাহর নির্দেশাবলী মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে যে নিজেকে সমর্পণ করে তাকেইও হানীফ বলা হয়। অতএব সহজ সরল সত্য দ্বীনই হচ্ছে দ্বীনে হানীফ। আল্ল্লাহ্ বলেন, তিনি (ইবরাহীম) ছিলেন হানীফ মুসলিম (আলে ইমরান ৬৭)। অর্থাৎ একনিষ্ঠ ও আত্মসমর্পিত। অতএব তাঁরও দ্বীনের নাম ছিল ইসলাম। তবে কুরাইশদের মধ্যে এটা দ্বীনে হানীফ নামে পরিচিত ছিল। কুরাইশরা নিজেদেরকে বনু ইবরাহীম বলত (আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ: ৩৯)। উম্মী অর্থ নিরক্ষর। এ শব্দের দ্বারা যদি উম্মী নবী উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এর অর্থ হবে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছা:)। কারণ তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেন না। এ ছিল এক মুজিযা। কারণ তাঁকেই আল্ল্লাহ্ আয়াত পাঠকারী এবং কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দানকারী বানিয়ে দেন (আলে ইমরান ১৬৪; জুমআহ্ ২)। আর যদি উম্মীঈন বুঝানো হয়, তাহলে এর দ্বারা তৎকালীন আরবদেরকে ও বিশেষ করে কুরায়েশদেরকে বুঝানো হয়েছে (জুমআ ২)।

এভাবে জমি দান করা কি শরী‘আত সম্মত?


প্রশ্ন : মসজিদ নির্মাণের জন্য জনৈক ব্যক্তি মসজিদে জমি দান করেছেন। কিন্তু জমির দলীলের শেষে লিখা আছে, আল্লাহ না করুন যদি মসজিদ ঘরটি ভেঙ্গে যায় বা অন্যত্রে স্থানান্তরিত করা হয় তাহলে উক্ত জমি মালিকের নামে বর্তাবে। এভাবে জমি দান করা কি শরীআত সম্মত?

উত্তর: এভাবে জমি ওয়াকফ্ হবে না। ওয়াকফকারীর শুধু অভিভাকত্ব চলবে। এছাড়া আর কোন শর্ত চলবে না। বিশেষভাবে মসজিদের নামে যা ওয়াকফ্ করা হয় তা শুধু মসজিদের কাজেই ব্যয় করতে হবে। কোন মসজিদ অনাবাদ হলে বা মসজিদের সম্পদ ব্যয় করার খাত না থাকলে অন্য মসজিদে নিয়ে যেতে হবে (ফিক্হ সুন্নাহ ওয়াক্ফ অধ্যায় ৩/৩৮৫)। কাজেই ওয়াক্ফ কৃত সম্পদ মালিকের কাছে ফিরে যাবে না।

মসজিদে জানাযার খাটলি রাখা যাবে কি?


প্রশ্ন : মসজিদে জানাযার খাটলি রাখা যাবে কি?

উত্তর: সামাজিক স্বার্থে মসজিদে খাটিয়া রাখা যায়। এর দ্বারা মৃত্যুকে স্মরণ হয়। যেহেতু মসজিদে খাওয়া-দাওয়া, অবস্থান করা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত সেহেতু খাটিয়া রাখা যেতে পারে (ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৩০০; বুখারী হা/৪৪০)। তবে মসজিদের পবিত্রতা ও মর্যাদার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেখা এবং মিম্বরে টাইল্স বসানো যাবে কি?


প্রশ্ন : মসজিদের সামনে আরবীতে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ লেখা এবং মিম্বরে টাইল্স বসানো যাবে কি?

উত্তর: মসজিদের মেহরাব বা দেওয়ালে উক্ত বাক্য কিংবা পবিত্র কুরআনের কোন আয়াত লেখা যাবে না। অনুরূপভাবে কারুকার্য খচিত টাইল্সও বসানো যাবে না। এগুলো ছালাতের একাগ্রতা বিনষ্ট করে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৫৭-৫৯)।

মরণোত্তর চক্ষুদান বা দেহ দান করা যাবে কি?


প্রশ্ন : মরণোত্তর চক্ষুদান বা দেহ দান করা যাবে কি?

উত্তর: ইসলামে মুমিন ব্যক্তির মৃত দেহকে অতীব সম্মান দান করা হয়েছে (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৭০৩)। তার মৃত দেহকে সযত্নে সাবান-পানি দিয়ে গোসল করিয়ে সুগন্ধি মাখিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে কাফন পরিয়ে তার পরকালীন মুক্তির জন্য সমবেত ভাবে জানাযার ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নামে সসম্মানে কবরে শুইয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার কবরকে ও তার দেহকে অসম্মান করতে নিষেধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে মৃতের হাড্ডি ভাঙ্গা জীবিতের হাড্ডি ভাঙ্গার ন্যায় (আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৭১৪)। এমতাবস্থায় মৃত্যুর তিন ঘণ্টার মধ্যে তার চোখ তুলে নেওয়া, ছয় ঘণ্টার মধ্যে কিডনী কেটে নেওয়া বা এমনিভাবে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা-ছেঁড়া করা মৃতের প্রতি সম্মানের পরিপন্থী। তাছাড়া মানবদেহের মূল মালিক আল্লাহ। অতএব কোন ব্যক্তির অধিকার নেই যে, আল্লাহর তৈরী দেহকে সে যথেচ্ছ ব্যবহারে দান করে দেবে। এক্ষণে যরূরী কোন রোগজীবাণু পরীক্ষা বা মানবতার কল্যাণে শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের স্বার্থে যথাযথ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সীমিত ক্ষেত্রে এটা করা যেতে পারে (লাজনা দায়েমা)। ঢালাওভাবে কখনোই নয়। নইলে মানবদেহ এক সময় ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হবে। তখন জীবন্ত মানুষকে হত্যা করে এই নিকৃষ্ট ব্যবসা চালানো হবে। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন!

শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

কুরআন পড়ে অন্যের নামে বখশাতে পারে কি?


প্রশ্ন : কুরআন পড়ে অন্যের নামে বখশাতে পারে কি?

উত্তর: উক্ত আমল শরীআত সম্মত নয়। দৈহিক ইবাদত অন্যকে বখশানো যায় না। যেমন একজনের ছালাত অন্যজনের হয় না। ইবনু ওমর (রা:) বলেন, একজনের ছওম অন্যজনে বা একজনের ছালাত অন্যজনে আদায় করতে পারে না (মুওয়াত্ত্বা, বায়হাক্বী সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২০৩৫ ছওম অধ্যায় ৫ অনুচ্ছেদ)। আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষ ততটুকুই পাবে যার জন্য সে চেষ্টা করবে (নাজম ৩৯)।

যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় তা-কি শরী‘আত সম্মত?


প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর তার কফিনকে ঘিরে সরকারিভাবে যে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং যে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয় তা-কি শরীআত সম্মত?

উত্তর: জানাযা ব্যতীত অন্য যা কিছু করা হবে, তা বিদআত হিসাবে গণ্য হবে। জাহেলী যুগে মৃতের জন্য শোক প্রকাশ ও বেশী করে কান্নাকাটির জন্য ভাড়াটিয়া লোক পাওয়া যেত। যে মৃতের জন্য যতবেশী লোক কাঁদতো, সে মৃত ব্যক্তি তত বেশী সম্মানিত বলে গণ্য হত। ইসলাম এসে এগুলি নিষিদ্ধ করে এবং বলা হয় যে, মৃতের জন্য পরিবারের কান্নাকাটির জন্য মৃতের কবরে আযাব হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৭৪১) যদি সে মৃত্যুর আগে এ থেকে নিষেধ না করে যায়। অতএব মুসলিম মুক্তিযোদ্ধাদের উচিত হবে মৃত্যুর পূর্বে এ বিষয়ে অছিয়ত করে যাওয়া যেন তার মৃত্যুর পরে জানাযা ব্যতীত অন্য কোন আনুষ্ঠানিকতা না করা হয়। নইলে উপরোক্ত হাদীছের আলোকে তার কবরে আযাব হতে পারে। 

তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট যাবতীয় কিছু প্রার্থনা কর।


প্রশ্ন : তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট যাবতীয় কিছু প্রার্থনা কর। এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে সেটাও চাও। উক্ত হাদীছটি কি ছহীহ।

উত্তর: উক্ত হাদীছটি যঈফ (যঈফ তিরমিযী হা/৩৬০৪; যঈফাহ হা/১৩৬২)। তবে আল্লাহর কাছে সর্বদা চাইতে হবে অন্যথা তিনি বান্দার উপর রাগান্বিত হন। আর আল্লাহর কাছে চাওয়া অধিক মর্যাদাকর বিষয় (তিরমিযী হা/৩৩৩৬, ৩৩৭০; মিশকাত হা/২২৩২)।

আমার পিতা মারা গেলে কাফন পরানোর সময়


প্রশ্ন : আমার পিতা মারা গেলে কাফন পরানোর সময় আমাদের মসজিদের ইমাম পিতার কপালে সুগন্ধি দ্বারা আল্লাহ ও মুহাম্মাদ লিখে দেন। এর পক্ষে কোন দলীল আছে কি?

উত্তর: মাইয়েতের কপালে সুগন্ধি দ্বারা আল্লাহ ও মুহাম্মাদ লেখার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। এগুলো বিদআত বা কুসংস্কার। মৃতকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অসংখ্য বিদআত সমাজে চালু আছে। এগুলো থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য (বিস্তারিত দ্র: ছালাতুর রাসূল (ছা:), পৃ: ১২৭-১২৯)।

ঘুমানোর সময় চোখে সুরমা দেওয়া যাবে কি?


প্রশ্ন : ঘুমানোর সময় চোখে সুরমা দেওয়া যাবে কি?

উত্তর: দেওয়া যাবে। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, তোমরা ঘুমানোর সময় চোখে ইছমাদ সুরমা লাগাও। এতে চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং ভ্রুতে নতুন লোম গজায় (ইবনু মাজাহ, হাকেম, আহমাদ, ইবনু হিববান, ছাহীহাহ হা/৭২৪; ছহীহুল জামে হা/৪০৫৪)।

মহিলাদেরকে জুম‘আর খুৎবা শুনানোর জন্য মসজিদের ছাদে মাইক দেয়া যাবে কি?


প্রশ্ন : মহিলাদেরকে জুমআর খুৎবা শুনানোর জন্য মসজিদের ছাদে মাইক দেয়া যাবে কি?

উত্তর: মহিলারা মসজিদের ছাদে থাকলে ছাদে মাইক ব্যবহার করতে পারে। তবে পাড়া-প্রতিবেশী মহিলাদেরকে জুমআর খুৎবা শুনানোর জন্য মাইক ব্যবহার করা যাবে না। কারণ তারা অমনোযোগী থাকে। আর এমন অবস্থায় কাউকে কুরআন-হাদীছ শুনানো ঠিক নয়। ইকরিমা থেকে বর্ণিত, ইবনু আববাস (রা:) বলেন, প্রত্যেক জুমআর দিন মানুষকে নছীহত কর। যদি তারা বেশী আগ্রহী হয় তাহলে সপ্তাহে দুবার। এর অধিক চাইলে তিনবার। কুরআনকে মানুষের বিরক্তির মাধ্যম কর না। মানুষের ব্যস্ততার সময় মানুষকে নছীহত কর না। এতে তাদের কথার বিঘ্ন ঘটে ও তাদের বিরক্তি আসে। বরং চুপ থাক। অত:পর যখন তারা আগ্রহ প্রকাশ করবে তখন তাদের নছীহত শুনাবে (বুখারী, মিশকাত হা/২৫২)।

কুরআন হেফয করার পর মুখস্থ না রাখতে পারলে গোনাহগার হবে। একথা কি ঠিক?


প্রশ্ন : কুরআন হেফয করার পর মুখস্থ না রাখতে পারলে গোনাহগার হবে। একথা কি ঠিক?

উত্তর: কুরআন ভুলে যাওয়া বড়ই মন্দ কাজ। চেষ্টা সত্ত্বেও যদি ভুলে যায়, তবে সে গুনাহগার হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, তোমরা কুরআনের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি রাখ। আল্লাহর কসম! উট যেমন বাঁধন হতে ছুটে চলে যায়, কুরআন তার চেয়ে বেশী দ্রুত চলে যায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২১৮৭)। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কষ্টকরভাবে কুরআন পাঠ করে, সে দ্বিগুণ ছওয়াব পায় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১১২)। তিনি বলেন, ক্বিয়ামতের দিন ছাহেবুল কুরআনকে বলা হবে, তুমি কুরআন পড়তে থাক এবং জান্নাতে তোমার সম্মানের স্তর বৃদ্ধি করতে থাক (আহমাদ, মিশকাত হা/২১৩৪)। উল্লেখ্য, যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ভুলে যাবে সে ক্বিয়ামতের দিন অঙ্গহানী অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ হা/১৪৭৪; মিশকাত হা/২২০০)।

ইমাম আবু হানীফা (রহ:) ৪০ বছর ঘুমাননি।


প্রশ্ন : আল-আক্বাইদ ফাযিল গাইডে লেখা হয়েছে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ:) ৪০ বছর ঘুমাননি। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

উত্তর: উক্ত বক্তব্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এছাড়া ইমাম ছাহেব এক ওযূতে ফজর পড়েছেন ৪০ বছর যাবৎ (২) তিনি প্রতি রাকআতে এক খতম কুরআন পড়তেন (৩) প্রতি রাতে এশার হাযার রাকআত ছালাত পড়তেন (৪) যে স্থানে তাঁর মৃত্যু হয়, সে স্থানে তিনি সাত হাযার বার কুরআন খতম করেন ইত্যাদি বিষয়ে আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌভী হানাফী (রহ:) বলেন, ইবাদতে বাড়াবাড়ি স্রেফ বিদআত। যারা এসব কথা বলে, তারা সবচেয়ে বড় বিদআতী ও বড় জাহিল (দ্র: মুক্বাদ্দামা শরহে বেক্বায়াহ (দেউবন্দ ছাপা) পৃ: ৩৬-৩৭)।

মা হাওয়া নাকের কোন্ দিকে নাকফুল ব্যবহার করতেন?


প্রশ্ন : মা হাওয়া নাকের কোন্ দিকে নাকফুল ব্যবহার করতেন? আমরা নাকের ডান দিকে নাকফুল ব্যবহার করি। কারণ রাসূল (ছা:) সব কাজ ডান দিক থেকে করা ভালবাসতেন। আমাদের একাজ কি শরীআত সম্মত হচ্ছে?

উত্তর: মা হাওয়া নাকে নাকফুল ব্যবহার করেছেন কিনা তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। রাসূল (ছা:) সব কাজ ডান দিক থেকে করতেন বলতে এই অর্থ নয় যে, নাকের ডান দিকে নাকফুল দিতে হবে; বরং সুবিধা অনুযায়ী দিবে। রাসূল (ছা:) ডান হাতে আংটি পরতেন। প্রয়োজনে কখনো বাম হাতেও পরতেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৯১-৪৩৯২; ইরওয়া ৩/৩০১)।

বদ নযর থেকে বাঁচার জন্য সন্তানের কপালে কাল টিপ দেওয়া যাবে কি?


প্রশ্ন : বদ নযর থেকে বাঁচার জন্য সন্তানের কপালে কাল টিপ দেওয়া যাবে কি? এটা সন্তানের কোন উপকার করতে পারে কি?

উত্তর: বদ নযর থেকে রক্ষার জন্য উক্ত টিপ দিলে সেটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। বদ নযর লাগলে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী ঝাড়-ফুঁক দিতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫২৬, ৪৫২৮)।

কেউ যখন রোগীর নিকট যাবে তখন সে তার কাছে দো‘আ চাইবে


প্রশ্ন : জনৈক আলেম বলেন, কেউ যখন রোগীর নিকট যাবে তখন সে তার কাছে দোআ চাইবে। কারণ তার দোআ ফেরেশতাগণের দোআর ন্যায়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?

উত্তর: উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০০৪; ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৫৮৮)।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

ঐ ছালাত কি পুনরায় পড়তে হবে?


প্রশ্ন : ফজরের ছালাতের সময়ের এক ঘণ্টা আগে ভুলবশত: আযান দিয়ে জামাআত সহ ছালাত আদায় করে ভুল বুঝা যায়। ঐ ছালাত কি পুনরায় পড়তে হবে?

উত্তর: ঐ ছালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। কারণ উক্ত ছালাত ওয়াক্তের অনেক পূর্বেই আদায় করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করতে বলেছেন (নিসা ১০৩)। রাসূল (ছা:)ও নির্দিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম হা/২৩৯)।

রেডিও-টিভিতে সম্প্রচারিত ফরয ছালাতের ইমামের অনুসরণে বাড়ীতে ছালাত আদায় করা বৈধ হবে কি?


প্রশ্ন : রেডিও-টিভিতে সম্প্রচারিত ফরয ছালাতের ইমামের অনুসরণে বাড়ীতে ছালাত আদায় করা বৈধ হবে কি?

উত্তর: বৈধ হবে না। ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করা জায়েয হওয়ার শর্ত হচ্ছে স্থান এক হতে হবে, কাতারগুলোকে মিলিতভাবে হতে হবে এবং ইমাম সম্মুখে থাকবেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১১৩৬-৩৮)।

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

পিতা-মাতাকে তুই বা তুমি বলে ডাকা যাবে কি?


প্রশ্ন : পিতা-মাতাকে তুই বা তুমি বলে ডাকা যাবে কি?

উত্তর: হীনকর কোন শব্দে পিতা-মাতাকে ডাকা যাবে না। উক্ত শব্দ দুটি সাধারণত: অসম্মানজনক সম্বোধনে ব্যবহার করা হয়। অতএব এ থেকে বিরত থাকাই উত্তম। তবে ঐসব সম্বোধনে যদি পিতা-মাতা খুশী হন, তবে বলা যাবে। আল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার সাথে সুন্দর কথা ও উত্তম আচরণ করতে বলেছেন (লোকমান ১৫; বণী ইসরাঈল ২৩)।

সরকারী খরচে হজ্জ করলে তার ফরযিয়াত আদায় হবে কি?


প্রশ্ন : সরকারী খরচে হজ্জ করলে তার ফরযিয়াত আদায় হবে কি?

উত্তর: তার ফরযিয়াত আদায় হয়ে যাবে। কেননা হজ্জের জন্য সক্ষমতা শর্ত (আলে ইমরান ৯৭)। হজ্জের যাবতীয় খরচ সরকারের পক্ষ থেকে তার নামে বরাদ্দ করা হয়। আর তখন তিনি সেই সম্পদের মালিক হয়ে যান। অবশ্য সক্ষম মুসলিম ব্যক্তির জন্য নিজের উপার্জিত পবিত্র সম্পদ দ্বারা হজ্জ করাই উত্তম।

এই দরূদ কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?


প্রশ্ন : নেয়ামুল কুরআনের ২৭-৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত বিভিন্ন দরূদ লেখা আছে। যেমন- দরূদে তাজ, দরূদে মাহী, দরূদে ফতুহাত প্রভৃতি। এই দরূদ কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?

উত্তর: এ সব দরূদ বানাওয়াট ও ভিত্তিহীন।

জানাযা ও দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলোতে হাত উঠানো যাবে কি?


প্রশ্ন : জানাযা ও দুই ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলোতে হাত উঠানো যাবে কি?

উত্তর: ওমর, ইবনু ওমর, আনাস ও অন্যান্য ছাহাবী থেকে ছহীহ মওকূফ সূত্রে হাত উঠানোর প্রমাণ পাওয়া যায় (মিরআত ৫/৫৩-৫৪; ইরওয়াউল গালীল ৩/১১৩)।

এক কবরে একাধিক লাশ রাখা যায় কি?


প্রশ্ন : এক কবরে একাধিক লাশ রাখা যায় কি?

উত্তর: যরূরী কারণে এক কবরে একাধিক লাশ রাখা যায়। নবী করীম (ছা:) ওহোদ যুদ্ধে শহীদ হওয়া ছাহাবীগণের একাধিক লাশ এক এক কবরে রেখেছিলেন (বুখারী হা/১৬০ ও ১৬৯)।

গরু ও ছাগল খাসী করার শারঈ কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?


প্রশ্ন: : গরু ও ছাগল খাসী করার শারঈ কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

উত্তর: খাসী করা জায়েয। রাসূলুল্লাহ (ছা:) খাসী করা ছাগল কুরবানী করেছেন (ছহীহ্ ইবনু মাজাহ্ হা/৩১২২; মিশকাত হা/১৪৬১)। যে হাদীছে নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে (বায়হাক্বী, ছহীহুল জামে হা/৬৯৬০) সে সম্পর্কে ইমাম নববী বলেন, সেগুলি হারাম পশুর বেলায় প্রযোজ্য (দ্র: মাছাবীহুত তানভীর আলা ছহীহিল জামে ২/১৫ পৃ:)।

ইক্বামতের উত্তর দিতে হবে কি?


প্রশ্ন : ইক্বামতের উত্তর দিতে হবে কি?

উত্তর: ইক্বামতের উত্তর দিতে হবে। কারণ আযান ও ইক্বামত দুটিকেই হাদীছে আযান বলা হয়েছে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৬২)। রাসূলুল্লাহ (ছা:) বলেন, মুওয়াযযিন যা বলে তোমরাও অনুরূপ বল (মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭; আলোচনা দ্র: আলবানী, মিশকাত হা/৬৭০-এর টীকা)। অতএব মুওয়াযযিন ইক্বামতের সময় যা বলবেন, মুক্তাদীগণ তাই বলবেন। উল্লে¬খ্য, ইক্বামতের সময় ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালাহ-এর জবাবে আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা বলা সংক্রান্ত হাদীছটি যঈফ। সুতরাং তা বলা যাবে না; বরং ক্বাদ-ক্বা-মাতিছ ছালা-হ বলতে হবে (আবুদাঊদ, আলবানী, তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৬৭০-এর টীকা দ্র:)।

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১১

দান করবেন বলে মানত করেন


প্রশ্ন : জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করলে মসজিদে ১০ শতক জমি দান করবেন বলে মানত করেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর উক্ত জমি মসজিদের পরিবর্তে গোরস্থানে দিতে চায়। এটা কি শরীআত সম্মত হবে?
উত্তর: মসজিদের জন্য মানত করে থাকলে মসজিদেই দিতে হবে। কারণ মসজিদের জমি মসজিদের স্বার্থে ব্যবহার করাই উত্তম। তবে জমিটি মসজিদের জন্য তেমন কোন কাজে না আসলে উপকারিতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। যদি কবরস্থানের জন্য বেশী উপকার বিবেচিত হয়, তাহলে সেখানে দিবে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ওয়াক্ফ অধ্যায় ৩/৩৮৫ পৃ:)।

জানাযার ছালাতে একদিকে সালাম ফিরান। এটা কতটুকু সঠিক?


প্রশ্ন : সঊদী আরবে ইমাম-মুক্তাদী সকলেই জানাযার ছালাতে একদিকে সালাম ফিরান। এটা কতটুকু সঠিক?

উত্তর: অন্যান্য ছালাতের ন্যায় জানাযার ছালাতেও উভয় দিকে সালাম ফিরানোর ছহীহ হাদীছ রয়েছে। আব্দুল্ল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রা:) বলেন, লোকেরা তিনটি কাজ ছেড়ে দিয়েছে, যেগুলো রাসূল (ছা:) করতেন। তার একটি হচ্ছে, জানাযার ছালাতের সালাম অন্যান্য ছালাতের ন্যায় হওয়া (সনদ হাসান, বায়হাক্বী, ত্বাবারাণী, আলবানী, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং ৮৪)। তবে শুধু ডান দিকেও সালাম ফিরানো যায় (দারাকুৎনী হা/১৮৩৯ ও ১৮৬৪; সনদ হাসান, আহকামুল জানায়েয, মাসআলা নং ৮৫)।

সর্বনিম্ন কতজন মুছল্লী হলে জুম‘আ কায়েম করা যায়?


প্রশ্ন : সর্বনিম্ন কতজন মুছল্লী হলে জুমআ কায়েম করা যায়?

উত্তর: সর্বনিম্ন দুজন অর্থাৎ ইমামের সাথে মাত্র একজন মুছল্লী থাকলে জুমআর ছালাত কায়েম করা যাবে (মিরআত ৪/৪৪৯-৫০)। কারণ জুমআর ছালাত অন্যান্য ফরয ছালাতের ন্যায় একটি ফরয ছালাত। আর ইমামের সাথে সর্বনিম্ন একজন থাকলেই জামাআতের ছওয়াব অর্জিত হয়। মূলত: সংখ্যা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কোন দলীল নেই। অতএব যদি দুজন থাকেন, তাহলে একজন খুৎবা দিবেন আর অন্যজন হবেন শ্রোতা। অত:পর দুজনে জামাআত কায়েম করবেন। কাব ইবনু মালেক বলেন, সর্বপ্রথম যিনি আমাদের নিয়ে জুমআর ছালাত আদায় করেন তিনি হলেন আসআদ বিন যুরারাহ্ ...। জিজ্ঞেস করা হল, সে সময় আপনারা কতজন ছিলেন? তিনি উত্তরে বলেন, চল্লিশ জন ছিলাম (ছহীহ্ আবুদাউদ হা/১০৬৯; ইরওয়াউল গালীল হা/৬০০)। উক্ত বর্ণনায় ঐ জুমআর ছালাতে কতজন উপস্থিত ছিলেন তা বুঝানো হয়েছে। সর্বদা চল্লিশ জনই হতে হবে তা বলা হয়নি। উল্লেখ্য, চল্লি¬শ জন অথবা এর চেয়ে বেশী সংখ্যক মুছল্লী উপস্থিত হলে জুমআ, ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিৎর আদায় করতে হবে মর্মে জাবের (রা:) বর্ণিত আছারটি অত্যন্ত যঈফ (দারাকুৎনী, ইরওয়াউল গালীল হা/৬০৩)।