বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১১

মসজিদে হারামে রামাযানের ২০ তারিখের পর

প্রশ্ন  : মসজিদে হারামে রামাযানের ২০ তারিখের পর রাত  ৯-টা থেকে ১১-টা পর্যন্ত ২০ রাকআত ছালাতুল লাইল আদায় করা হয়। অতঃপর রাত ১-টা হতে ৩-টা পর্যন্ত ১১ রাকআত ক্বিয়ামুল লাইল জামআতের সাথে আদায় করা হয়। উক্ত ছালাতের বিশুদ্ধ প্রমাণ জানিয়ে বাধিত করবেন। এছাড়া তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ এবং ক্বিয়ামুল লাইল ও ছালাতুল লাইল কি পৃথক পৃথক ছালাত?

উত্তর : উক্ত পদ্ধতির পক্ষে শরী
আতে কোন দলীল পাওয়া যায় না। কারণ রাতের নফল ছালাত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রমাযান এবং রমাযান ছাড়া অন্য সময়ে এগারো রাকআতের বেশী পড়েননি (বুখারী, মুসলিম প্রভৃতি)। সুতরাং মসজিদুল হারামে করা হচ্ছে বলে একে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। উল্লেখ্য, অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কোন এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে রাতের ছালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাতের ছালাত দুরাকআত দুরাকআত। এভাবে যদি সকাল হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে এক রাকআত আদায় করে নিবে যা পূর্বে পঠিত ছালাতকে বেজোড় করে ফেলবে (বুখারী হা/৪৭২)। উক্ত হাদীছের আলোকে অনেকে বেশী পড়ার কথা বললেও তা ১১ রাকআতের বেশী হবে না । কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১১ রাকআতের বেশী পড়েননি। ক্বিয়ামুল লাইল আর ছালাতুল লাইল একই ছালাত। হাদীছে উভয় শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে (ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৬৬)

কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা যাবে কি?

উত্তর : কুরবানীর গোশত তিন শ্রেণীর ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টিত হবে। আল্লাহ বলেন,
তা হতে তোমরা খাও, অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও এবং ভিক্ষাকারীকে দাও (হজ্জ ৩৬)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারকে খাওয়াতেন ও একভাগ অভাবী প্রতিবেশীদের দিতেন ও একভাগ সায়েলদের মধ্যে ছাদাক্বা করতেন। প্রয়োজনে ভাগে কম-বেশী করা যাবে। কিংবা সবটুকু ছাদাক্বা করায়ও কোন দোষ নেই (মিরআত ৫/১২০; ইবনু কুদামা, মুগনী ১১/১০৮-০৯)

ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যাবে কি?

উত্তর : ছয় মাসের ভেড়া কুরবানী করা যায় না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে ছাহাবীকে অনুমতি দিয়েছিলেন সেটা তার জন্য খাছ ছিল (ইরওয়া ৪/৩৫৭ পৃঃ)

সাত ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?

প্রশ্ন  : সাত ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?

উত্তর : মুক্বীম অবস্থায় ভাগে কুরবানী করার কোন বিধান নেই। বরং একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই যথেষ্ট। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে। সফর অবস্থায় ভাগা কুরবানী করা সম্পর্কে ছহীহ দলীল রয়েছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হ
ল।
(১) আয়েশা (রাঃ) হ
তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন... অতঃপর দোআ পড়লেন
بِسْمِ اللهِ اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ-
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন।
অর্থঃ
আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ। আপনি কবুল করুন মুহাম্মাদের পক্ষ হতে, তার পরিবারের পক্ষ হতে ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হতে। এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন (ছহীহ মুসলিম, ছহীহ তিরমিযী হা/১২১০, ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১২৮; মিশকাত, পৃঃ ১২৭, ২৮, হা/১৪৫৪ কুরবানী অনুচ্ছেদ)
(২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী (সনদ ছহীহ, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২১; ছহীহ নাসাঈ হা/৩৯৪০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/১৪৭৮)
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরেও তাঁর সুন্নাত অনুযায়ী ছাহাবীগণের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের পক্ষ থেকে একটা করে কুরবানী করার প্রচলন ছিল। যেমন আতা ইবনু ইয়াসির ছাহাবী আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ)-কে রাসূলের যুগে কেমনভাবে কুরবানী করা হ
ত মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিত। অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৬ কুরবানী অধ্যায়; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/২৫৩৩ নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা অনুচ্ছেদ, কুরবানী অধ্যায়)
(৪) প্রখ্যাত ছাহাবী আবু সারীহা (রাঃ) বলেন,
একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটা অথবা দুটা করে বকরী কুরবানী  করা (ছহীহ  ইবনু  মাজাহ  হা/২৫৪৭) ইমাম শাওকানী (রহঃ) উপরোক্ত পরপর তিনটি হাদীছ পেশ করে বলেন, হক কথা হল, একটি পরিবারের পক্ষ হতে একটি ছাগলই যথেষ্ট, যদিও সেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা শতাধিক হয় (নায়লুল আওত্বার ৬/১২১ পৃঃ, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ছাগল কুরবানী করাই যথেষ্ট অনুচ্ছেদ)
ভাগা কুরবানী : সফরে থাকাকালীন সময়ে ঈদুল আযহা উপস্থিত হ
লে একটি পশুতে একে অপরে শরীক হয়ে ভাগে কুরবানী করা যায়। যেমন-
(ক) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,
আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হল। তখন আমরা সাত জন একটি গরুতে ও দশ জন একটি উটে শরীক হলাম (ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩১২৮, ছহীহ নাসাঈ হা/৪০৯০; সনদ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/১৪৬৯, কুরবানী অনুচ্ছেদ)
(খ) জাবির (রাঃ) বলেন, হুদায়বিয়ার সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তখন একটি গরুতে সাত জন ও একটি উটে সাত শরীক হয়ে কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম হা/১৩১৮
হজ্জ অধ্যায়; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪৩৫; ছহীহ তিরমিযী হা/১২১৪; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১৩২)
(গ) জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হজ্জের সফরে ছিলাম। তখন সাত জনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাত জনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছিলাম (ছহীহ মুসলিম ২/৯৫৫ পৃঃ)। উল্লেখ্য, উক্ত রাবী জাবির থেকে ছহীহ মুসলিমে সফর সংক্রান্ত আরো হাদীছ রয়েছে।
বিভ্রান্তির কারণ হ
ল, জাবের (রাঃ) বর্ণিত আবুদাঊদের ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটি। সেখানে বলা হয়েছে, গরুতে সাতজন আর উটে সাতজন। এখানে সফর না মুক্বীম তা বলা হয়নি। কিন্তু এটি যে সফরের হাদীছ তা জাবের (রাঃ) বর্ণিত অন্যান্য হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। দ্বিতীয়তঃ ইমাম আবূদাঊদ জাবের বর্ণিত সফরের হাদীছগুলি যে অধ্যায়ে  বর্ণনা করেছেন এই ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছটিও সে অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বিষয়টি আরো স্পষ্ট। তৃতীয়তঃ হাদীছে বলা হয়েছে সাত জনের পক্ষ থেকে অথচ সমাজে (মুক্বীম অবস্থায়) চালু আছে সাত পরিবারের পক্ষ থেকে। অথচ সফর অবস্থাতেও সাত পরিবারের অনুমতি নেই। আরো স্পষ্ট হল সাত জনের প্রেক্ষাপট কেবল সফর অবস্থায় সৃষ্টি হয়। আর মুক্বীম অবস্থায় কুরবানী পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন রাসূল (ছাঃ) মদীনায় থাকা অবস্থায় করতেন। চতুর্থতঃ অনেকে বলেন, সফরের হাদীছগুলো আম। যদি আম হয় তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ মুক্বীম অবস্থায় ভাগা কুরবানী করতেন মর্মে দলীল কোথায়? উপরন্তু কুরবানী হল পিতা ইবরাহীমের সুন্নাত। আর তা ছিল ইসমাঈলের জীবনের বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ হতে পাঠানো একটি পশুর জীবন। অর্থাৎ দুম্বা। এক্ষণে যদি আমরা ভাগা কুরবানী করি, তাহলে পশুর হাড়-হাড্ডি ও গোশত ভাগ করতে পারব, কিন্তু তার জীবনটা কার ভাগে পড়বে? অতএব ইবরাহীমী ও মুহাম্মাদী সুন্নাতের অনুসরণে নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে আল্লাহ্র রাহে একটি জীবন তথা একটি পূর্ণাঙ্গ পশু কুরবানী দেওয়া উচিত, পশুর দেহের কোন খন্ডিত অংশ নয় (বিস্তারিত দ্রঃ আত-তাহরীক জানুয়ারী ২০০২, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা (১/১০৬; মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীক্বা পৃঃ ১৯-২০)

দোতলা মসজিদের নীচের তলা মার্কেট করা যায় কি?


প্রশ্ন  : দোতলা মসজিদের নীচের তলা মার্কেট করা যায় কি?

উত্তরঃ মসজিদের নীচে বা উপরে মার্কেট করা যায় (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৩১/২৫৯)

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১১

ঈদের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সমূহে হাত তোলা যাবে কি?


প্রশ্ন  : ঈদের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সমূহে হাত তোলা যাবে কি?

উত্তর : ঈদের অতিরিক্ত তাকবীরগুলোতে হাত তোলা যাবে (ফিরইয়াবী, সনদ ছহীহ, মওকূফ, ইরওয়া ৩/১১৩)। ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকবীরের সাথে হাত উঠাতেন (ইরওয়া হা/৬৪১)। মালেক ইবনে আনাস (রাঃ) বলতেন, তোমরা অতিরিক্ত তাকবীর সমূহে হাত তোল (ইরওয়া ৩/১১৩ পৃঃ)

মহিলারা জুম‘আর ছালাত মসজিদে গিয়ে

প্রশ্ন  : মহিলারা জুমআর ছালাত মসজিদে গিয়ে জামাআতের সাথে আদায় করতে পারে কি?

উত্তর : মহিলাদের জন্য জুম
আর জামাআতে অংশগ্রহণ করা জায়েয। যদি সেখানে পর্দার ব্যবস্থা থাকে এবং মহিলা শারঈ লেবাস পরিহিতা হন ও সুগন্ধি না মাখেন। যদি স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি থাকে। অন্য কোন সমস্যা না থাকলে অভিভাবকদের নিষেধ করা উচিত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা আল্লাহর দাসীদের মসজিদে যাওয়া থেকে নিষেধ করো না (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১০৫৯-৬০)। তবে সাধারণভাবে তাদের জন্য গৃহে ছালাত আদায় করাই উত্তম (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১০৬২-৬৩)। জুমআয় গেলে খুৎবার মাধ্যমে তারা অনেক কিছু শিখতে পারেন। যেকারণ অনেক মহিলা ছাহাবী জুমআয় অংশগ্রহণ করতেন ও রাসূলের খুৎবা শুনতেন। যেমন উম্মে হেশাম বিনতে হারেছাহ (রাঃ) বলেন, আমি খুৎবায় রাসূলের মুখে শুনে শুনে সূরা ক্বাফ-এর প্রথমাংশ মুখস্ত করেছি। ইনি ছিলেন রাসূলের নিকটতম প্রতিবেশী (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০৯; মিরআত ২/৩১০; তাফসীর ইবনে কাছীর, সূরা ক্বাফ)

কুরআন মাজীদের আয়াত মোবাইলের রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : কুরআন মাজীদের আয়াত মোবাইলের রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা যাবে কি?

উত্তর : যাবে না। এতে কুরআন মজীদের অবমাননা হয়। কারণ এতে আয়াত ও শব্দের যেকোন স্থানে বন্ধ করা হ
তে পারে। পবিত্র অপবিত্র যেকোন স্থানে এবং আগ্রহী অনাগ্রহী যেকোন ব্যক্তির কাছে তেলাওয়াত হতে পারে, যা অসিদ্ধ (বুখারী, মিশকাত হা/২৫২) এবং কুরআনের জন্য অসম্মানজনক। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই এটি সম্মানিত কুরআনযা ছিল সুরক্ষিত কিতাবেপূত-পবিত্রগণ ব্যতীত যাতে কেউ স্পর্শ করে না যা বিশ্বপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ (ওয়াক্বিআহ ৭৭-৮০)

কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন?


প্রশ্নঃ  : কাদিয়ানী মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন?
 
উত্তর : কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফের। চৌদ্দশ
হিজরীর প্রথম দিকে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর (১৮৩৫-১৯০৮) মাধ্যমে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইংরেজদের সহযোগিতায় এ সম্প্রদায় জন্মলাভ করে (পৃঃ ১১৮-২২)। গোলাম আহমাদ প্রথমে নিজেকে মুজাদ্দিদ ও ইমাম মাহদী দাবী করে। এরপর নিজেকে ঈসা ইবনু মারইয়াম বলে দাবী করে। এমনকি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করে (পৃঃ ১০৮)
নিম্নে তাদের কিছু আক্বীদা্ উল্লেখ করা হ
লঃ (১) তারা বিশ্বাস করে যে, স্বয়ং আল্লাহ্ ছালাত আদায় করেন, ছওম পালন করেন, ঘুমান, জাগ্রত থাকেন, লিখেন, সঠিক করেন, ভুল করেন, স্ত্রীর সাথে মিলিত হন ইত্যাদি (পৃঃ ৯৭)। (২) তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে শেষনবী বলে স্বীকার করে না (পৃঃ ১০২)। (৩) তারা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নবী ও রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (পৃঃ ১০৩, ১০৮)। (৪) তারা বিশ্বাস করে যে, গোলাম আহমাদের নিকট জিবরীল (আঃ) অহি নিয়ে আগমন করতেন (পৃঃ ১০৬)। (৫) যারা গোলাম আহমাকে বিশ্বাস করে না তাদেরকে তারা কাফির আখ্যা দিয়ে থাকে এবং তাদেরকে চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করে (পৃঃ ১২২)। (৬) তারা মুসলিমদের পিছনে ছালাত আদায় করাকে জায়েয মনে করে না এবং মুসলমানদের সাথে বিবাহ-শাদী হারাম মনে করে ও তাদের কবরস্থানে মুসলমানদের দাফন নিষিদ্ধ বলে (পৃঃ ৩৪, ৩৬-৩৭)
(৭) বৃটিশ প্রভুদের খুশী করার জন্য গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী তার বায়
আত নামায় বলেন, যে ব্যক্তি ইংরেজ হুকুমতের আনুগত্য করে না, বরং তাদের বিরুদ্ধে মিছিল করে, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয় (পৃঃ ১২১-২২)। ইংরেজরা সবচেয়ে ভয় পায় মুসলমানদের জিহাদী জাযবাকে। তাই তিনি লেখেন, তোমরা এখন থেকে জিহাদের চিন্তা বাদ দাও। কেননা দ্বীনের জন্য যুদ্ধ হারাম হয়ে গেছে। এখন ইমাম ও মসীহ এসে গেছেন এবং আসমান থেকে আল্লাহর নূর অবতরণ করেছেন। অতএব কোন জিহাদ নেই। সুতরাং যারা এখন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে, তারা আল্লাহর শত্রু (পৃঃ ১১৯)। (৮) তাঁর লিখিত বই আল-কিতাবুল মুবীন-কে তারা কুরআনের ন্যায় মনে করে যা বিশ পারায় সমাপ্ত এবং এর বিরোধী সবকিছুকে তারা বাতিল গণ্য করে (পৃঃ ১০৮, ১১৭)। (৯) তারা কাদিয়ান শহরকে মক্কা-মদীনার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মনে করে এবং ঐ শহরের মাটিকে তারা হারাম শরীফ বলে (পৃঃ ১১১-১২)। (১০) তারা তাদের দ্বীনকে পৃথক ও নতুন পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করে। গোলাম আহমদের সাথীদেরকে ছাহাবা এবং তার অনুসারীদের নতুন উম্মত বলে (পৃঃ ১১০)। (১১) কাদিয়ানে তাদের বার্ষিক সম্মেলনকে হজ্জ মনে করে (১১৬)। এছাড়াও তাদের বহু মন্দ আক্বীদা রয়েছে (বিস্তারিত দ্রঃ ইহসান ইলাহী যাহীর, আল-ক্বাদিয়ানিয়াহ : দিরাসাত ও তাহলীল (রিয়াদ : ১৪০৪/১৯৮৪) পৃঃ ৯৪-১২৩; ১৫৪-৫৯)
গোলাম আহমাদের শেষ পরিণতি : অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্স-এর সেক্রেটারী ও সাপ্তাহিক
আখবারে আহলেহাদীছ পত্রিকার সম্পাদক আবুল অফা ছানাউল্লাহ্ অমৃতসরী (রহঃ) অনেকগুলি মুনাযারায় তাকে পরাজিত করেন। মাওলানা ছানাউল্লাহর আগুনঝরা বক্তৃতা ও ক্ষুরধার লেখনীতে অতিষ্ঠ হয়ে গোলাম আহমাদ ১৯০৭ সালের ১৫ই এপ্রিল তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাওলানা ছানাউল্লাহকে মুবাহালা করার আহবান জানিয়ে বলেন, আমাদের দুজনের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তাকে যেন আল্লাহ সত্যবাদীর জীবদ্দশায় মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ মিথ্যুকের দোআ কবুল করেন এবং বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৩ মাস ১০ দিন পর ১৯০৮ সালের ২৬ মে কঠিন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে নাক-মুখ দিয়ে পায়খানা বের হওয়া অবস্থায় এই ভন্ডনবী ন্যাক্কারজনকভাবে লাহোরে নিজ কক্ষের টয়লেটে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ মুবাহালা গ্রহণকারী সত্যসেবী আহলেহাদীছ নেতা আল্লামা ছানাউল্লাহ আমৃতসরী মৃত্যুবরণ করেন মিথ্যাবাদীর মৃত্যুর প্রায় ৪০ বছর পরে ১৯৪৮ সালের ১৫ই মার্চ তারিখে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলালে তার মাথার চুলের সমপরিমাণ নেকী পাওয়া যায়


প্রশ্ন  : শোনা যায়, পিতা-মাতা আছে এমন শিশুদের মাথায় হাত বুলালে দশ নেকী হয়। কিন্তু ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলালে তার মাথার চুলের সমপরিমাণ নেকী পাওয়া যায়, এ কথার ছহীহ দলীল জানতে চাই।

উত্তর : পিতা-মাতা আছে এমন শিশুর মাথায় হাত বুলালে দশটি ছওয়াব হয় কথাটি সঠিক নয়। আর ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলালে তার মাথার চুলের সমপরিমাণ ছওয়াব পাওয়া যায় মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৯৭৪, যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৫১৩)। তবে অন্য হাদীছে এসেছে যে, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলালে অন্তর কোমল হয় (আহমাদ সনদ হাসান, ছহীহাহ হা/৮৫৪; মিশকাত হা/৫০০১)

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১১

সন্তানকে তাজ্যপুত্র করা যাবে কি


প্রশ্ন  : আমার ছেলে বিভিন্ন অন্যায়ের সাথে জড়িত। কোন ক্রমেই সে অন্যায় বর্জন করে না। তার মা তার অন্যায়ের সহযোগিতা করে। এমতাবস্থায় সন্তানকে তাজ্যপুত্র করা যাবে কি এবং এ ধরনের স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবে কি?

উত্তর : ছেলেকে তাজ্যপুত্র করা যাবে না। ভাল করার প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর ভয় দেখাতে হবে (আহমাদ, মিশকাত হা/৬১)। স্ত্রীকেও ভাল উপদেশ দিতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৩৮)। শেষ পরিণতি হিসাবে তাকে তালাক দিতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩২৩৯)

অন্যের সন্তানকে নিজ সন্তান হিসাবে গ্রহণ করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : অন্যের সন্তানকে নিজ সন্তান হিসাবে গ্রহণ করা যাবে কি?

উত্তর : এ নিয়ম জাহেলী যুগে চালু থাকলেও ইসলাম একে নিষিদ্ধ করেছে (আহযাব ৪ ও ৫ নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ)। যে কেউ নেকীর উদ্দেশ্যে ইয়াতীম বা দরিদ্র সন্তানকে লালন-পালন করতে পারে। তবে সে যখন থেকে বুঝতে শিখবে তখন তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে, লালন-পালনকারী তার প্রকৃত বাবা-মা নয়।

যাকাতের অর্থ মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করা যাবে কি?


প্রশ্ন  : যাকাতের অর্থ মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করা যাবে কি?

উত্তর : আল্লাহ রাববুল
আলামীন যাকাত বন্টনের যেসব খাত উল্লেখ করেছেন, মসজিদ তার অন্তর্ভুক্ত নয় (তওবা ৬০)। সুতরাং মসজিদ নির্মাণের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না (ফিক্বহুস সুন্নাহ যাকাত বন্টন অধ্যায়, ১/৪৭০ পৃঃ)

পুত্রবধুর সাথে যেনায় লিপ্ত


প্রশ্নঃ  : জনৈক ব্যক্তি তার পুত্রবধুর সাথে যেনায় লিপ্ত হয়। এমতাবস্থায় তার পুত্রের বিবাহ বিচ্ছেদ হবে কি? স্বামী যদি ঐ স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করে তাহলে সে গোনাহগার হবে কি?

উত্তর : ঐ ব্যক্তি জঘন্যতম পাপ করেছে, যার জন্য শরী
আতে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এই অবৈধ কর্মের জন্য স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হবে না। কারণ কোন অবৈধ সম্পর্ক কোন বৈধ বিবাহকে হারাম করে না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, যেনা বৈবাহিক বন্ধনকে হারাম করে না (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, বায়হাক্বী, ইরওয়া ৬/২৮৭ পৃঃ, হা/১৮৮১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক লোক তার শাশুড়ীর সাথে যেনা করলে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তারা পাপী। কিন্তু এ পাপ তার স্ত্রীকে তার জন্য হারাম করে না (বায়হাক্বী, ইরওয়া ৬/২৮৮ পৃঃ)। আলী (রাঃ) বলেন, যেনা বৈধ বিবাহ বন্ধনকে হারাম করতে পারে না (ইরওয়া ৬/২৮৮ পৃঃ, তালীক্ব বুখারী)। স্বামী ঐ স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করায় দোষ হবে না। কিন্তু যদি সে স্ত্রীর উক্ত অবৈধ কর্মকে মেনে নেয় ও তাকে আরও সুযোগ দেয়, তাহলে সে দাইঊছ হবে এবং তার জন্য জান্নাত হারাম হবে (আহমাদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩৬৫৫ দন্ড বিধি অধ্যায় ৬ অনুচ্ছেদ)

এ ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।


প্রশ্নঃ  : যাকারিয়া (আঃ)-কে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা হত্যা করার জন্য ধাওয়া করলে তিনি গাছের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। গাছ তাকে আশ্রয় দেয়। শয়তান তাদেরকে এ খবর জানিয়ে দিলে গাছটিকে তারা করাত দিয়ে চিরে ফেলে। এ ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : উক্ত ঘটনা সঠিক নয় (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/৫৪)। বিভিন্ন তাফসীর ও ইতিহাস গ্রন্থে এ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। যা বানোয়াট ইসরাঈলী বর্ণনা মাত্র।

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

মৃতকে বাবা-মার পাশে কবর দেয়াতে কোন ফযীলত আছে কি?


প্রশ্ন  : আমার মা আমার নানার জমিতে দীর্ঘ দিন থেকে বসবাস করেন। সেখানে তাকে কবর দেয়া যাবে কি? মৃতকে বাবা-মার পাশে কবর দেয়াতে কোন ফযীলত আছে কি?

উত্তর : দেয়া যাবে। তবে কবরস্থানে কবর দেওয়াই ভাল (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০০)। পিতা-মাতার পাশে কবর দেওয়ার কোন ফযীলত আছে বলে জানা যায় না। তবে ওমর ফারূক (রাঃ) রাসূলের পাশে কবরস্থ হওয়ার জন্য আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট যে আবেদন করেছিলেন, তার কারণ হিসাবে ইবনু হাজার বলেন, এটা ছিল আল্লাহ্র রহমতে শরীক হওয়ার জন্য, যা নেককার ব্যক্তিদের উপরে নাযিল হয় এবং নেককার ব্যক্তিদের দো
আ পাওয়ার জন্য যারা সেখানে যেয়ারত করেন (ফৎহুল বারী হা/১৩৯২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)

আমি তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করার চেষ্টা করি।


প্রশ্ন  : আমি তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করার চেষ্টা করি। অনেক সময় জাগতে না পারায় ছুটে যায়।  এমতাবস্থায় কিভাবে বিতর পড়তে হবে?

উত্তর : তাহাজ্জুদ ছালাত ছুটে গেলে দিনে পড়ে নেয়া ভাল। আয়েশা (রাঃ) বলেন, যে কোন কারণে রাতে ছালাত ছুটে গেলে, নবী করীম (ছাঃ) দিনে ১২ রাক
আত ছালাত আদায় করতেন (মুসলিম হা/১৭৩৯, ৪৩ মুসাফিরের ছালাত অধ্যায়)। তাহাজ্জুদ রাসূলের জন্য ছিল নির্ধারিত নফল ছালাত (বনু ইস্রাঈল ৭৯)। অন্যদেরকেও রাত্রির নফল ছালাত আদায়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ফরয ছালাতের পর সর্বোত্তম ছালাত হল রাতের ছালাত (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯)। তিনি বলেন, আল্লাহ্র নিকট প্রিয়তম নেক আমল হল যা নিয়মিত করা হয়। যদিও তা কম হয় (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৪২)। কিন্তু দুর্বল মানুষ সবসময় একটি নেক আমল নিয়মিতভাবে করতে সক্ষম হয় না। সেকারণ তিনি বলেন, তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমিয়ে গেলেও পরে যদি কেউ সময়মত উঠতে না পারে, তাহলে নিয়তের কারণে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ নেকী পাবে এবং উক্ত ঘুম তার জন্য ছাদাক্বা হবে (নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/৪৫৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, যদি কেউ আগ রাতে বিতরের পর দুরাকআত নফল ছালাত আদায় করে এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদে উঠতে সক্ষম না হয়, তাহলে উক্ত দুরাকআত তার জন্য যথেষ্ট হবে (দারেমী, মিশকাত হা/১২৮৬)। আল্লাহ বলেন, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে অবিচ্ছিন্ন পুরস্কার (হা-মীম সাজদাহ ৮, তীন ৬)। অতএব দুএক রাত ছুটে গেলেও তাহাজ্জুদের অভ্যাস জারি রাখা কর্তব্য।  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কেউ বিতর রেখে ঘুমিয়ে গেলে সে যেন সকালে বিতর পড়ে নেয় (তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৬৮)। অন্য বর্ণনায় আছে, নবী করীম (ছাঃ) বলেন, কেউ বিতর রেখে ঘুমিয়ে গেলে অথবা ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে অথবা যখন ঘুম থেকে জাগবে, তখন সে যেন বিতর পড়ে নেয় (তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৭৯)