আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত
আক্বীদা
(শেষ কিস্তি)
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মাটির তৈরী না নূরের?
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে মাটি থেকে, জিন জাতিকে আগুন থেকে এবং
ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ মাটির তৈরী একথা পবিত্র কুরআনের বহু
স্থানে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও মানুষ ছিলেন এবং তিনিও
মাটির তৈরী ছিলেন। এক্ষেত্রে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। তবে অনেকে বিশ্বাস করে যে,
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নূরের সৃষ্টি, অথচ কুরআন-সুন্নাহ বলছে তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি।
সাধারণভাবে চিন্তা করলে বুঝা যাবে যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর পিতা-মাতা মাটির
তৈরী সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাদের উভয়ের মিলনের ফলে তিনি জন্ম লাভ করেছেন। মাটির
মানুষ থেকে মাটির মানুষই সৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাটির মানুষ থেকে কি
করে নূরের তৈরী মানুষের জন্ম হ’তে পারে?
রাসূল (ছাঃ)
বিবাহ করেছিলেন, তাঁর সন্তান-সন্ততিও ছিল। তাঁরা সবাই মাটির মানুষ ছিলেন। রাসূল
(ছাঃ) খাবার খেতেন, সাধারণ মানুষের মতই জীবন-যাপন করতেন এবং তাঁর প্রয়োজন ছিল
পেশাব-পায়খানার। অন্য সব মানুষের মত নবী করীম (ছাঃ) মৃত্যু বরণও করেছেন। সুতরাং
কোন জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ রাসূল (ছাঃ)-কে নূরের সৃষ্টি বলতে পারে না। পূর্বযুগের
কাফেররা নবী-রাসূলদেরকে মেনে নিতে চাইতো না; কারণ তাঁরা সবাই মাটির মানুষ ছিলেন।
সকল নবী-রাসূলগণ যেমন মাটির মানুষ ছিলেন তেমনি নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)ও মাটির মানুষ
ছিলেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বিশদ বিবরণ উপস্থাপিত হয়েছে।
কুরআনে বর্ণিত
হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মাটি থেকে
সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি
করেছি মৃত্তিকার মূল উপাদান হ’তে’ (মুমিনূন ১২)।
পূর্ববর্তী
নবী-রাসূলগণ যে মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, এ মর্মে কুরআন থেকে দলীল :
(১) নূহ (আঃ)
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আর তার সম্প্রদায়ের প্রধানেরা যারা কাফের ছিল, তারা বলল, আমরা
তো তোমাকে আমাদের মতই মানুষ ব্যতীত কিছু দেখছি না’ (হূদ ২৭)।
(২) আল্লাহ বলেন,
তাদের রাসূলগণ বলেছিলেন, আল্লাহ সম্বন্ধে
কি কোন সন্দেহ আছে, যিনি আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদেরকে আহবান
করেন তোমাদের পাপ মার্জনা করার জন্য এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ
দিবার জন্য? তারা বলত, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ’ (ইবরাহীম ১০)।
(৩) আল্লাহ বলেন,
‘তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বলেছিলেন, নিশ্চয়ই আমরা
তোমাদের মত মানুষ’ (ইবরাহীম ১১)।
(৪) আল্লাহ বলেন,
‘যখন তাদের নিকট আসে
পথ-নির্দেশ, তখন লোকদেরকে এই উক্তিই বিশ্বাস স্থাপন হ’তে বিরত রাখে, আল্লাহ কি মানুষকে রাসূল করে পাঠিয়েছেন?’ (বানী ইসরাঈল
৯৪)।
(৫) আল্লাহ বলেন,
‘যারা যালিম তারা গোপনে
পরামর্শ করে, এতো তোমাদের মত একজন মানুষই’ (আম্বিয়া ৩)।
(৬) নূহ (আঃ)
সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ
যারা কুফরী করেছিল, তারা বলল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষ’ (মুমিনুন ২৪)।
(৭) আল্লাহ বলেন,
‘তার সম্প্রদায়ের প্রধানগণ, যারা কুফরী করেছিল ও
আখিরাতের সাক্ষাৎকারকে অস্বীকার করেছিল এবং যাদেরকে আমি দিয়েছিলাম পার্থিব জীবনে
প্রচুর ভোগ-সম্ভার, তারা বলেছিল, এতো তোমাদের মত একজন মানুষ, তোমরা যা আহার কর সেও
তাই আহার করে এবং তোমরা যা পান কর সেও তাই পান করে। যদি তোমরা তোমাদেরই মত একজন
মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ (মুমিনূন
৩৩-৩৪)।
(৮) মূসা এবং
হারূণ (আঃ) সম্পর্কে ফেরাঊন ও তার কওম বলল,- ‘তারা বলল, আমরা কি এমন দু’ব্যক্তিতে বিশ্বাস স্থাপন করব, যারা আমাদেরই মত এবং তাদের
সম্প্রদায় আমাদের দাসত্ব করে’ (মুমিনূন ৪৭)।
(৯) ঈসা (আঃ) সম্পর্কে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের অনুরূপ; তিনি তাঁকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করলেন’ (আলে ইমরান
৫৯)।
মুহাম্মাদ
(ছাঃ) মাটির তৈরী এ সম্পর্কে কুরআনের দলীল :
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো শুধু একজন মানুষ,
একজন রাসূল’ (বানী
ইসরাঈল ৯৩)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়
যে, তোমাদের মা‘বূদ একজন। সুতরাং যে তাঁর
প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তাঁর প্রতিপালকের ইবাদতে
কাউকেও শরীক না করে’ (কাহফ ১১০)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই
একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র (সত্য) মা‘বূদ’ (হা-মীম সিজদা ৬)।
উল্লিখিত
আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত নবী রাসূলগণ মাটির মানুষ ছিলেন। অনুরূপভাবে
আমাদের নবীও মাটির মানুষ ছিলেন। মানুষের অভ্যাস ভুলে যাওয়া, অপারগ ও অসুস্থ হওয়া,
ক্ষুধা-তৃষ্ণা লাগা, বিবাহ করা, সন্তান-সন্ততি হওয়া ইত্যাদি। এ সকল গুণ নবী-রাসূল
সবার মাঝেই ছিল। তাঁদের সবার পিতা-মাতা ছিল, তাঁদের সবার স্ত্রী-পরিবার ছিল। তাঁরা
খেতেন, পান করতেন, রোগ ও বালা-মুছীবতে পতিত হতেন। তাঁরা অনেক সময় ভুলেও যেতেন। এ
সকল গুণ দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, তাঁরা সবাই মাটির সৃষ্টি মানুষ ছিলেন, নূরের
তৈরী ছিলেন না।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মাটির মানুষ ছিলেন, এ সম্পর্কে হাদীছের দলীল :
রাসূল (ছাঃ)-এর অনেক সময় ভুল-ত্রুটি হ’ত। ছালাত আদায়ের সময় যখন তিনি ভুলে
যেতেন, তখন বলতেন, ‘নিশ্চয়ই আমি
তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমি ভুলে যাই, যেমনভাবে তোমরা ভুলে যাও। সুতরাং আমি ভুলে গেলে
তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিবে’।(বুখারী, হা/৪০১; মুসলিম, হা/১২৭৪।)
সকল ফেরেশতা নূর থেকে সৃষ্টি এবং আদম সন্তান সবাই পানি ও মাটি থেকে
সৃষ্টি। আর জিন জাতি আগুন থেকে সৃষ্টি। যেমন হাদীছে এসেছে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন,
‘সকল ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং জিন
জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর আদম জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেই সমস্ত ছিফাত
দ্বারা, যে ছিফাতে তোমাদের ভূষিত করা হয়েছে’। অর্থাৎ মানব জাতিকে মাটি ও পানি দ্বারা সৃষ্টি করা
হয়েছে। (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭০১।
)
এই হাদীছটি সমাজে
বহুল প্রচলিত হাদীছকে বাতিল করে। তা হচ্ছে ‘হে জাবের আল্লাহ সর্বপ্রথম
তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন’। অনুরূপ অন্য যে
হাদীছগুলোতে বলা হয়েছে, রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরী, সেগুলোও বাতিল। কারণ উপরোক্ত
হাদীছটি প্রমাণ করে যে, সকল ফেরেশতা নূর থেকে সৃষ্ট; আদম সন্তান নয়।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) মাটির মানুষ ছিলেন, এ সম্পর্কে মনীষীগণের অভিমত :
ইমাম ইবনে হাযম (রহঃ) বলেন, সমস্ত নবী এবং ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ
(ছাঃ) আল্লাহর বান্দা, তাঁরা সমস্ত মানুষের মতই সৃষ্ট মানব। সবার জন্ম হয়েছে নারী-পুরুষের
সংমিশ্রণে। শুধুমাত্র আদম এবং ঈসা (আঃ) ব্যতীত। অবশ্য আদমকে আল্লাহ তা‘আলা মাটি থেকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন,
কোন নারী পুরুষের সংমিশ্রণ ছাড়া। আর ঈসা (আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন তাঁর মায়ের পেট থেকে
কোন পুরুষের স্পর্শ ছাড়া। ( ইবনু হাযম,
আল-মুহাল্লা, ১/২৯। )
শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনে বায (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এ বিশ্বাসের উপর
মৃত্যুবরণ করবে যে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মাটির মানুষ নয় বা আদম সন্তান নয় অথবা বিশ্বাস
করে যে, তিনি অদৃশ্যের খবর জানেন, এটা কুফরী এবং একে বড় কুফরী গণ্য করা হবে অর্থাৎ
ইসলাম থেকে বহিষ্কারকারী কুফরী। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৫/৩১৯। )
কুরআন বলছে, সকল
নবী-রাসূল মাটির তৈরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজেও বলেছেন, আমি তোমাদের মতই মানুষ।
বিদ্বানগণ বলছেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মাটির মানুষ, সকল নবী-রাসূল এবং সকল সাধারণ
মানুষের মত। এর পরেও যদি কেউ মিথ্যা বানোয়াট হাদীছ উল্লেখ করে বলে, তিনি নূরের
তৈরী, তাহ’লে সে হবে আক্বীদাভ্রষ্ট।
রাসূল
সম্পর্কে জাল বা বানাওয়াট হাদীছ সমূহ
(১) জাবের (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ
(ছাঃ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হউক। আপনি বলুন, আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন?
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উত্তরে বললেন, হে জাবের! আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম তাঁর নূর দ্বারা তোমার
নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সে নূরকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ দ্বারা কলম,
এক ভাগ দ্বারা লাওহে মাহফূয ও একভাগ দ্বারা আরশে আযীম সৃষ্টি করেছেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আসমান-যমীন ফেরেশতা, জিন প্রভৃতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। (মৌলভী মুহাম্মদ যাকির হুসাইন, মুকাম্মাল মীলাদে
মুস্তফা (সঃ), পৃঃ ৪১। ) এই হাদীছটি বাতিল, কোন হাদীছ গ্রন্থে হাদীছটি পাওয়া
যায় না।
(২) লাওহে মাহফূয সৃষ্টির পর তাতে আল্লাহর নামের পার্শ্বে মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-এর নাম অর্থাৎ কালেমায় তাইয়িবাহ লিখে রাখা হয়। ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেছেন,
জান্নাতে আদম (আঃ) যখন আল্লাহর একটি আদেশ লংঘন করে পরে নিজ ভুল বুঝতে পারলেন, তখন তিনি
আল্লাহ তা‘আলার নিকট
এভাবে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ রাববুল আলামীন! আপনি আমাকে মুহাম্মাদের অসীলায় ক্ষমা
করে দিন। আল্লাহ পাক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আদম! তুমি মুহাম্মাদকে চিনলে কিভাবে, তাঁকে
তো আমি এখন পর্যন্ত সৃষ্টি করিনি? তখন আদম (আঃ) বললেন, হে দয়াময় প্রভু! আমাকে সৃষ্টি
করে যখন আপনি আমার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিলেন, তখন আমি চক্ষু মেলে তাকিয়ে দেখলাম, আরশের
গায়ে লেখা রয়েছে ‘লা ইলা-হা
ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ’। তখন আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই আপনি ঐ ব্যক্তির নাম আপনার
নিজের সাথে যুক্ত করে দিয়েছেন, যিনি আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, হে আদম! তুমি ঠিকই বলেছ।
নিঃসন্দেহে মুহাম্মাদ সৃষ্টি জগতের মধ্যে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয়। এমনকি তাঁকে সৃষ্টি
না করলে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না। (মুকাম্মাল
মীলাদে মুস্তফা (সঃ), পৃঃ ৪১। )
ইমাম ত্বহাবী বলেন, হাদীছটি আহলুল ইলমের নিকট নিতান্ত দুর্বল। (
তাহযীবুত তাহযীব ২/৫০৮ পৃঃ।
) আবূদাঊদ, আবূ যুর‘আ, ইমাম নাসাঈ,
ইমাম দারা-কুত্বনী এবং ইবনে হাজার আস-ক্বালানী সবাই বলেন, হাদীছটি দুর্বল।(ইমাম নাসাঈ, কিতাবুয যু‘আফা ওয়াল মাতরূকীন, পৃঃ ১৫৮, হা/৩৭৭।
)
ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, হাদীছটি যে দুর্বল এ ব্যাপারে সবাই
একমত। নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটি বানাওয়াট।(সিলসিলা যঈফা হা/২৫। ) ইমাম আলুসী
হানাফী বলেন, হাদীছটির কোন ভিত্তিই নেই।(গায়াতুল
আমানী ১/৩৭৩। )
(৩) হাদীছে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় প্রিয়তম নবী (ছাঃ)-কে লক্ষ্য
করে বলেছিলেন, ‘যদি আপনাকে
সৃষ্টি না করতাম, তবে নিশ্চয়ই এ কুল-মাখলূক সৃষ্টি করতাম না’।(মুকামমাল মীলাদে মুস্তফা (সঃ), পৃঃ ৪০। ) হাদীছটি বানাওয়াট,
বাতিল।
(৪) হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আপনি না হ’লে আসমান-যমীন কিছুই সৃষ্টি করতাম
না। ( আবুল হাসান আল-কাত্তানী, তানযীহুশ
শরী‘আত আন আহাদীছিশ শী‘আ, ১/৩২৫। ) ইবনু জাওযী বলেন, হাদীছটি
যে বানাওয়াট এতে কোন সন্দেহ নেই। ইমাম দারা-কুত্বনী বলেন, হাদীছটি দুর্বল। ফালাস বলেন,
হাদীছটি বানাওয়াট।(ইবনুল জাওযী, কিতাবুল
মাওযূ‘আত, ২/১৯।
)
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, অর্থাৎ আল্লাহ রাববুল আলামীন সর্বপ্রথম আমার নূরকে
সৃষ্টি করেছেন। (মুকাম্মাল মীলাদে
মুস্তফা (সঃ), পৃঃ ৭৭। ) এটা হাদীছ নয়; বরং ছূফীদের বানাওয়াট কথা।
(৬) হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আপনি না হ’লে আসমান-যমীন, আরশ-কুরশী, চন্দ্র-সূর্য
ইত্যাদি কিছুই সৃষ্টি করা হ’ত
না। ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, এটি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ নয়। এটি কোন বিদ্বান
তাঁদের হাদীছ গ্রন্থে হাদীছে রাসূল বলে উল্লেখ করেননি এবং ছাহাবায়ে কেরাম থেকেও বর্ণিত
হয়নি। বরং এটি এমন একটি কথা, যার বক্তা জানা যায় না। (মাজমূ‘
ফাতাওয়া ১১/৯৬। )
(৭) আদম (আঃ)
সৃষ্টি হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে জ্যোতির্ময় নক্ষত্র রূপে মুহাম্মাদের নূর অবলোকন করে
মুগ্ধ হন।
(৮) মি‘রাজের সময় আল্লাহ পাক তাঁর নবীকে জুতা সহ আরশে আরোহন করতে বলেন,
যাতে আরশের গৌরব বৃদ্ধি পায়’ (নাঊযুবিল্লাহ)।
(৯) রাসূলের
জন্মের খবরে খুশি হয়ে আঙ্গুল উঁচু করার কারণে ও সংবাদ দানকারিণী দাসী ছুওয়াবাকে
মুক্তি দেয়ার কারণে জাহান্নামে আবু লাহাবের হাতের দু’টি আঙ্গুল পুড়বে না। এছাড়াও প্রতি সোমবার রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম
দিবসে জাহান্নামে আবু লাহাবের শাস্তি মওকূফ করা হবে বলে আববাস (রাঃ)-এর ইসলাম
গ্রহণের পূর্বে দেখা একটি স্বপ্নের বর্ণনা তাঁর নামে সমাজে প্রচলিত আছে, যা
ভিত্তিহীন।
(১০) মা আমেনার
প্রসবকালে জান্নাত হ’তে বিবি মরিয়াম, বিবি
আসিয়া ও মা হাজেরা দুনিয়ায় নেমে এসে সবার অলক্ষ্যে ধাত্রীর কাজ করেন।
(১১) নবীর জন্ম মুহূর্তে কা‘বার প্রতিমাগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ে, রোমের অগ্নি উপাসকদের
‘শিখা অনির্বাণ’গুলো দপ করে নিভে যায়। বাতাসের গতি,
নদীর প্রবাহ, সুর্যের আলো সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ইত্যাদি...। ( মৌলুদে দিল পছন্দ, মৌলুদে ছাদী, আল-ইনছাফ, মিলাদ
মাহফিল প্রভৃতি দ্রষ্টব্য। ) উপরের বিষয়গুলো সবই বানাওয়াট ও ভিত্তিহীন।(
বিস্তারিদ দ্রঃ মাওযু‘আতে কবীর প্রভৃতি; ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব,
মীলাদ প্রসঙ্গ, পৃঃ ১২।)
পরিশেষে বলব,
আল্লাহ ও রাসূল সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বর্ণনা মোতাবেক সঠিক আক্বীদা
পোষণ করতে হবে। তাঁদের প্রতি যথাযথ ঈমান আনতে হবে। তাহ’লেই প্রকৃত মুমিন হওয়া যাবে। ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণ করে যেমন
মুমিন হওয়া যাবে না, তেমনি পরকালে নাজাতও মিলবে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে দ্বীনের
সঠিক বুঝ দান করুন-আমীন!