বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১১

আল্লাহর কসম! আমি বাকী জীবনে


প্রশ্ন : জনৈক ব্যক্তি পবিত্র কুরআন নিয়ে দৃঢ়ভাবে শপথ করে যে, আল্লাহর কসম! আমি বাকী জীবনে এই পাপ আর করব না। কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পুনরায় ঐ পাপে লিপ্ত হলে তার হুকুম কী?

উত্তর: কুরআন মজীদে হাত দিয়ে শপথ করা শারঈ তরীকা নয় এবং পাপ মুক্ত হওয়ারও পদ্ধতি নয়। বরং ক্ষমা পেতে হ
লে আল্লাহ্র নিকট তওবা করতে হবে। পাপ থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে, পুনরায় না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করতে হবে এবং আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদি পুনরায় একই পাপে জড়িয়ে পড়ে তাহলে আবার তওবা করতে হবে।
তবে শপথ ভঙ্গ করার কারণে কাফফারা দিতে হবে। এর কাফফারা হচ্ছে- (১) দশজন মিসকীনকে খাওয়ানো (২) অথবা তাদের পোষাক প্রদান করা (৩) অথবা দাস-দাসী মুক্ত করা (বর্তমানে এটি নেই)। এগুলো করার সামর্থ্য না থাকলে তিনদিন ছিয়াম পালন করবে (মায়েদাহ ৫/৮৯)

সূরা বাক্বারায় এমন একটি আয়াত আছে যা পাঠ করলে কেউ জাহান্নামে গেলেও তাকে আগুনের তাপ লাগবে না, একটি পশমও পুড়বে না


প্রশ্ন: : জনৈক বক্তা বলেছেন, সূরা বাক্বারায় এমন একটি আয়াত আছে যা পাঠ করলে কেউ জাহান্নামে গেলেও তাকে আগুনের তাপ লাগবে না, একটি পশমও পুড়বে না। প্রশ্ন হল সেটা কত নম্বর আয়াত এবং কতবার পড়তে হবে?

উত্তর: এটি ভিত্তিহীন কথা মাত্র। জাহান্নামে গিয়ে যদি আগুনের তাপ না লাগে, পশমও যদি না পুড়ে তাহ
লে আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামে দিবেন কেন? এমন কথা বলা থেকে সাবধান হওয়া উচিত।

ছালাত কখন ক্বছর করতে হয়?


প্রশ্ন : ছালাত কখন ক্বছর করতে হয়? ক্বছর করা ওয়াজিব না সুন্নাত? ছালাতে কছর না করলে গোনাহ হবে কি? রাসূল (ছা:) ও ছাহাবায়ে কেরাম কি কছর করতেন?

উত্তর: মুসাফির ব্যক্তি ছালাত কছর করবে (নিসা ১০১; ছহীহ মুসলিম হা/৬৯১; মিশকাত হা/১৩৩৭)। কিন্তু মুসাফির হয়ে মুক্বীম ইমামের পেছনে ছালাত আদায় করলে পূর্ণই পড়তে হবে (আহমাদ, ইরওয়াউল গালীল হা/৫৭১)। কছর করা ওয়াজিব নয় এবং কছর না করলে গুনাহও হবে না। তবে কছর করা উত্তম (মুসলিম, মিশকাত হা/১৩৩৫)

শরী‘আত বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত


প্রশ্ন : বর্তমানে শরীআত বিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করা হচ্ছে। এ সমস্ত স্থানে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে কি?

উত্তর: এসব অনুষ্ঠানের পূর্বে কুরআন তেলাওয়াত করা যাবে না। কারণ যেখানে কুরআনের মুল্যায়ন থাকে না সেখানে কুরআন তেলাওয়াত করা শরী
আতে নিষিদ্ধ (বুখারী, মিশকাত হা/২৫২)

পবিত্র কুরআন ৩০ পারা না ৯০ পারা?


প্রশ্ন : পবিত্র কুরআন ৩০ পারা না ৯০ পারা?

উত্তর: পবিত্র কুরআন ৩০ পারা। যা আল্লাহ তা
আলা রাসূলুল্লাহ (ছা:)-এর উপর জিবরীল (আ:)-এর মাধ্যমে নাযিল করেছেন। এর শুরু সূরা ফাতিহা দিয়ে এবং শেষ সূরা নাস দিয়ে। এ কুরআনকেই আল্লাহ হেফাযত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন (হিজর ৯)। কোন কোন অমুসলিম ও ভ্রান্ত ফের্কার লোকেরা কুরআনকে কম-বেশী বলে মন্তব্য করে থাকে। এদের চক্রান্ত থেকে সাবধান থাকা উচিত।

ওশর, ফিৎরা ও কুরবানীর টাকা মাদরাসায় দেওয়া যাবে না।


প্রশ্ন : জনৈক আলেম বলেছেন ওশর, ফিৎরা ও কুরবানীর টাকা মাদরাসায় দেওয়া যাবে না। উক্ত দাবীর সত্যতা জানতে চাই।

উত্তর: উক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। বরং বেসরকারী দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সম্পদের বেশী হকদার। ফী সাবীলিল্লাহ খাত থেকে এসব স্থানে এ সম্পদ দেওয়া যাবে (তওবাহ ৬০)

কাউকে জিজ্ঞেস করা হ’ল যে, আপনি কেমন আছেন?


প্রশ্ন: :  কাউকে জিজ্ঞেস করা হল যে, আপনি কেমন আছেন? সে উত্তরে বলল, আল্লাহর রহমতে ও আপনাদের দোআয় ভাল আছি। এরূপ বলা যাবে কি?

উত্তর: এরূপ বলা উচিত নয়। বরং বলতে হবে
আল্লাহর রহমতে অত:পর আপনাদের দোআয় ভাল আছি। এখানে অত:পর শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ (ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২১১৭; ছহীহ বুখারী হা/৬৬৫৩, শপথ ও মানত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/১৮৭৮)। তবে শুধু আল-হামদুলিল্লাহ্ ভাল আছি বলা উচিত।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১১

সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর


সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর


আমাদের দেশে ইসলামী ইলম চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো । কুরআন ও হাদীসের বঙ্গানুবাদও হয়েছে প্রায় দুশো বছর । আমাদের দেশে অনেক গুলো প্রকাশনী সিয়াহ সিত্তাহ সহ আরো অনেক হাদীস সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছে । কিন্তু সব প্রকাশনীর প্রকাশনার মান এক রকম নয় । তাই আপনারা সব থেকে সেরা হাদীস গ্রন্থ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কোন প্রকাশনী থেকে কিনবেন তার একটা পরামর্শ আপনাদের দিতে চাই ।
আমি সহীহুল বুখারীর খন্ড গুলি মোট তিনটি প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করেছি । এগুলো হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স ।এ তিনটির প্রকাশনার ভেতরে আমার তুলনামূলক তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনা বেশি ভাল লেগেছে । তাই আমি আপনাদের ওই প্রকাশনীর সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করবো । তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি এর ভূমিকা থেকে কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরছিঃ
আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় হাদীস অনুবাদের কাজ যদিও বহু পূর্বেই শুরু হয়েছে তবুও বাংলা ভাষায় হাদীস চর্চায় আমরা পিছিয়ে । ফলে এখনও আমরা সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে হাদীসের ব্যাপারে অশিক্ষিত অনভিজ্ঞ নামধারী কতিপয় আলিমদের মনগড়া ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে আমাদের আমলের ক্ষতি সাধন করছি । আর সাথে সাথে সহীহ হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা তাকলীদের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি ।
আমাদের দেশে যারা এ সকল সহীহ হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছেন তাদের অনেকেই আবার হাদীসের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনুবাদে গড়মিল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ।নমুনা স্বরুপ মূল বুখারীতে ইমাম বুখারী কিতাবুস সাওমের পরে কিতাবুত তারাবীহ নামক একটি পর্ব রচনা করেছেন । অথচ ভারতীয় মূদ্রণের মধ্যে দেওবন্দি আলিমদের চাপে (?) কিতাবুত তারাবীহ কথাটি মুছে দিয়ে সেখানে কিয়ামুল লাইল বসানো হয়েছে । অবশ্য প্রকাশক পৃষ্ঠার একপাশে কিতাবুত তারাবীহ লিখে রেখেছেন । .. (আরবী) । সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে , এ অধ্যায় দ্বারা সলাতুত তারাবীহ উদ্দেশ্য । আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য হতে প্রকাশিত সকল বুখারীতে কিতাবুত তারাবীহ বহাল তবিয়তে আছে , যা ছিল ইমাম বুখারীর সংকলিত মূল বুখারীতে ।
আর আধুনিক প্রকাশনী জানি না ইচ্ছাকৃত ভাবে না অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই কিতাবুত তারাবীহ নামটি ছেড়ে দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট হাদীস গুলোকে কিতাবুস সাওমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । অনেক স্থানে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল অনুবাদ করেছেন । অনেক স্থানে অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন । কোথাও বা মূল হাদীসকে অনুচ্ছেদে ঢুকিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে , এটা হাদীসের মূল সংকলকের ব্যক্তিগত কথা বা মত । কোথাও বা সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মাসআলা সম্বলিত লম্বা লম্বা টিকা লিখে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন । এতে করে সাধারণরা পড়ে গিয়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে । কারণ টিকা গুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে যে , সাধারণ পাঠক মনে করবেন টিকাতে যা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক ; আসল তথ্য উদঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন । আর শাইখুল হাদীস আজিজুল হক সাহেবের বুখারীর অনুবাদের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না । তিনি বুখারীর অনুবাদ করেছেন না প্রতিবাদ করেছেন তা আমাদের বুঝে আসেনা । কারণ তিনি অনুবাদের চেয়ে প্রতিবাদমূলক টিকা লিখাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন , যা মূল কিতাবের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন । যে কোন হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ করার অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত । কিন্তু সহীহ হাদীসের বিপরীতে অনুবাদে , ব্যাখ্যায় হাদীস বিরোধী কথা বলা জঘন্য অপরাধ ।
এই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীস নম্বর ও অন্যান্য বহুবিধ বৈশিষ্ট্যসহ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হল । শুধু তাই নয় , বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই প্রকাশনার মধ্যে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদে পাওয়া যাবে না । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১. আল-মুজামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীস হচ্ছে একটি বিষ্ময়কর হাদীস অভিধান গ্রন্থ । গ্রন্থটিতে আরবি বর্ণমালার ধারা অনুযায়ী কুতুবুত ‍তিসআহ ( বুখারী , মুসলিম , তিরমিযী , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনু মাজাহ , মুসনাদ আহমাদ , মুওয়াত্তা ইমাম মালিক , দারেমী ) নয়টি হাদীস গ্রন্থের শব্দ আনা হয়েছে । যে কোন শব্দের পাশে সেটি কোন কোন হাদীস গ্রন্থে এবং কোন পর্বে বা কোন অধ্যায়ে আছে তা উল্লেখ রয়েছে ।
আমাদের দেশে এ গ্রন্থটি অতটা পরিচিতি লাভ না করলেও বিজ্ঞ আলিমগণ এটির সাথে খুবই পরিচিত । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের ছাত্র শিক্ষক সবার নিকট বেশ সমাদৃত । অত্র গ্রন্থের হাদীস গুলো আল মুজামুল মুফাহরাসের ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । যার ফলে অন্যান্য প্রকাশনার হাদীসের নম্বরের সাথে এর নম্বরের মিল পাওয়া যাবে না । আর এর সর্বমোট হাদীস সংখ্যা হবে ৭৫৬৩ টি । আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৭০৪২ টি । আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৬৯৪০ টি ।
২. যে সব হাদীস একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে অথবা হাদীসের অংশ বিশেষের সংগে মিল রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি হাদীসের শেষে পূর্বোল্লিখিত ও পরোল্লিখিত হাদীসের নম্বর যোগ করা হয়েছে । যার ফলে একটি হাদীস বুখারীর কত জায়গায় উল্লেখ আছে বা সে বিষয়ের হাদীস কত জায়গায় রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে । আর একই বিষয়ের উপর যাঁরা হাদীস অনুসন্ধান করবেন তাঁরা খুব সহজেই বিষয়ভিত্তিক হাদীস গুলো বের করতে পারবেন । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে :  ( ১০০২ , ১০০৩ , ১৩০০ , ২৮০১ , ২৮১৪ , ৩৯৬৪ , ৩১৭০ , ৪০৮৮ , ৪০৮৯ , ৪০৯০ , ৪০৯১ , ৪০৯২ ,৪০৯৪ , ৪০৯৫ , ৪০৯৬ , ৬৩৯৪ , ৭৩৪১ ) বন্ধনীর হাদীস নম্বর গুলোর মধ্যে ১০০১ নং হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাওয়া যাবে ।
৩. বুখারীর কোন হাদীসের সঙ্গে সহীহ মুসলিমের কোন হাদীসের মিল থাকলে মুসলিমের পর্ব অধ্যায় ও হাদীস নম্বর প্রতিটি হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( মুসলিম ৫/৫৪ হা/৬৭৭ ) অর্থাৎ পর্ব নং ৫ , অধ্যায় নং ৫৪ , হাদীস নং ৬৭৭ । সহীহ মুসলিমের হাদীসের যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা মুজামুল মুফাহরাসের নম্বর তথা ফুয়াদ আব্দুল বাকী নির্ণিত নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
৪. বুখারীর কোন হাদীস যদি মুসনাদ আহমাদের সঙ্গে মিলে তাহলে মুসনাদ আহমাদের হাদীস নম্বর সেই হাদীসের শেষে যোগ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আহমাদ ১৩৬০২ ) এটির নম্বর এহইয়াউত তুরাস আল-ইসলামীর নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
৫. আমাদের দেশে মুদ্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসের ক্রমিক নম্বরে অমিল রয়েছে । তাই প্রতিটি হাদীসের শেষে বন্ধনীর মাধ্যমে সে দুটি প্রকাশনার হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আ.প্র.৯৪২ ই.ফা.৯৪৭ ) অর্থাৎ আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস নং ৯৪২ , আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস নং ৯৪৭ ।
৬. প্রতিটি অধ্যায়ের ( অনুচ্ছেদ ) ক্রমিক নং এর সঙ্গে কিতারে ( পর্ব ) নম্বরও যুক্ত থাকবে যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি কত নম্বর কিতাবের কত নম্বর অধ্যায় । যেমন ১০০১ নং হাদীসের পূর্বে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যার নম্বর ১৪/৭ অধ্যায় : অর্থাৎ ১৪ নং পর্বের ৭ নং অধ্যায় ।
৭. যারা সহীহ বুখারীর অনুবাদ করতে গিয়ে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বা মাযহাবী অন্ধ তাকলীদের কারণে লম্বা লম্বা টিকা লিখেছেন তাদের সে টিকার দলীল ভিত্তিক জবাব দেয়া হয়েছে ।
৮. আরবী নামের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ রোধকল্পে প্রায় প্রতিটি আরবী শব্দের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের চেষ্টা করা হয়েছে । যেমন : আয়েশা এর পরিবর্তে আয়িশাহ্ , জুম্মা এর পরিবর্তে জুমুআহ্ , নবী এর পরিবর্তে নাবী , রাসূল এর পরিবর্তে রসূল , ম্ক্কা এর পরিবর্তে মাক্কাহ , ইবনে এর পরিবর্তে ইবনু , উম্মে সালমা এর পরিবর্তে উম্মু সালামাহ্ , নামায এর পরিবর্তে সলাত ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচলিত বানানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ।
৯. সাধারণের পাশাপাশি আলিমগণও যেন এর থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য অধ্যায় ভিত্তিক বাংলা সূচি নির্দেশিকার পাশাপাশি আরবী সূচি উল্লেখ করা হয়েছে ।
১০. বুখারীর কত জায়গায় কুরআনের আয়াত এসেছে এমনকি আয়াতের একটি শব্দ আসলেও সেটির সূরার নাম , আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ।
১১. ইনশাআল্লাহ সমৃদ্ধ অধ্যায় ভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা সহ প্রতিটি খন্ডে থাকবে সংক্ষিপ্ত পর্বভিত্তিক বিশেষ সূচি নির্দেশিকা । এতে কোন পর্বে কতটি অধ্যায় ও কতটি হাদীস রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে জানা যাবে ।
১২. হাদীসে কুদসী চিহ্নিত করে হাদীসের নম্বর উল্লেখ ।
১৩. মুতাওয়াতির ১৪. মারফু১৫. মাওকুফ ও ১৬. মাকতু হাদীস নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে । ফলে সে হাদীস গুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ।
১৭. প্রতিটি খন্ডের শেষে পরবর্তি খন্ডের কিতাব/পর্বভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে  ।
শুধু সহীহ বুখারী নয় যে কোন হাদীস গ্রন্থই তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে কেনার জন্য আমার সু-পরামর্শ থাকলো । কারণ বুখারী মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীস গন্থে কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীসও রয়েছে । যেগুলোর উপর আমল করা নিষিদ্ধ । একমাত্র তাওহীদ পাবলিকেশন্সই বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর তাহক্বীক্ব করা হাদীস গন্থ এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে । যার উদাহরণ আপনারা এই লিংক থেকে তাহক্বীক্ব রিয়াদুস সালেহীন ডাউনলোড করে দেখুন বুঝতে পারবেন । www.qurqneralo.com
আল্লাহ আমাদের যঈফ ও জাল হাদীস থেকে বাঁচার এবং সহীহ হাদীসের উপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন ।

আল্লাহর মহত্ব প্রকাশক কতিপয় শ্রেষ্ঠ যিক্ র

আল্লাহর মহত্ব প্রকাশক কতিপয় শ্রেষ্ঠ যিক্ র

KziAvb Ges nvw`‡mi Av‡jv‡K gywgb‡`i R‡b¨ me mgq D”PviY Kivi whK&i mg~n :
1. PviwU whK&i: mnxn gymwj‡g mvgyiv web Ryb`ye †_‡K ewY©Z, im~jyj­vn mv. e‡j‡Qb : me‡P‡q ghv©`vevb Ges Avj­vn&i me‡P‡q wcÖq K_v n‡jv PviwU :
-          سُبْحَانَ الله ÔAvj­vn cweΠΓwU gy³|Õ
-        اَلْحَمْدُ لِلّٰه Ômg¯— cÖksmv Avj­vn&i|Õ
-        لاَ اِلٰهَ الاَّ الله ÔAvj­vn Qvov †Kv‡bv Bjvn& †bB|Õ
-        اَللهُ اَكْبَر ÔAvj­vn me©‡kªô|Õ
2. ¸Yvn gvd cvevi whK&i : mnxn eyLvwi I gymwj‡g Avey ûivqiv iv. †_‡K ewY©Z, im~jyj­vn mv. e‡j‡Qb : †h K_vwUi PvB‡Z †kªô K_v wb‡q wKqvg‡Zi w`b Avi †KD Dcw¯’Z n‡ebv (Z‡e †h Abyiƒc ev Zvi PvB‡Z AwaK e‡j, †m Qvov) Ges †h K_vwU Øviv mgy‡`ªi †dbv mgZzj¨ ¸bvn gvd K‡i †`qv n‡e; Zvn‡jv cÖwZw`b mKv‡j Ges mܨvq kZevi GB K_v ejv :
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه
 ÔAvj­vn&i cweÎZv †NvlYv KiwQ Zvui cÖksmvi mv‡_Õ|
3. IR‡b fvwi D”Pvi‡Y nvjKv Avj­vn&i wcÖq `ywU K_v : mnxn eyLvwi I gymwj‡g Avey ûivqiv †_‡K ewY©Z, im~jyj­vn mv. e‡j‡Qb : Ggb `ywU †QvU evK¨ Av‡Q, hv D”Pvi‡Y nvjKv, wgRv‡bi IR‡b n‡e fvwi Ges `qvgq-ingv‡bi Kv‡Q LyeB wcÖq, Zv n‡jv :
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِه سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ
A_©: Avj­vn&i cweÎZv †NvlYv KiwQ Zvui cÖksmvmn Ges gnvb Avj­vn&i cweÎZv I ΓwUnxbZv †NvlYv KiwQ|
4. Rvbœv‡Zi fvÛvi : mnxn eyLvwi I gymwj‡g Avey g~mv Avkqvwi iv. †_‡K ewY©Z, wZwb e‡jb, im~jyj­vn mv. GK md‡i Avgv‡K ej‡jb: †n Ave`yj­vn Be‡b Kv‡qm! Rvbœv‡Zi fvÛvi mg~‡ni GKwU fvÛv‡ii msev` wK Avwg †Zvgv‡K †`‡evbv? Avwg ejjvg: Aewk¨ †n Avj­vn&i im~j| wZwb ej‡jb, Zvn‡jv :
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِالله
A_©: ÔAvj­vn&i mvnvh¨ Qvov Kv‡iv †Kv‡bv Dcvq I kw³ mvg_© bvB|Õ
5. Rvnvbœv‡gi Av¸b hv‡K ¯úk© Ki‡ebv : wZiwgwh Ges Beby gvRvq Avey mvqx` Ges Avey ûivqiv iv. †_‡K ewY©Z| Zvuiv e‡jb, im~jyj­vn mv. e‡j‡Qb : †h e¨w³ wb‡æv³ K_v¸‡jv †NvlYv Ki‡e (Ges †g‡b Pj‡e), Zvi D”Pvi‡Yi mv‡_ mv‡_ Avj­vn wb‡RI Zv †NvlYv Ki‡eb| ZvQvov †ivMvµvš— Ae¯’vq †h e¨w³ GB whK&i¸‡jv D”PviY Ki‡e Ges †m †iv‡M hw` †m gviv hvq, Z‡e Rvnvbœv‡gi Av¸b Zv‡K f¶Y Ki‡ebv| †m K_v¸‡jv n‡jv :
Avj­vn Qvov †Kv‡bv ûKzgKZv© †bB Ges wZwb me©‡kªô|
لاَ اِلٰهَ الاَّ اللهُ وَالله اَكْبَرَ
Avj­vn Qvov †Kv‡bv Dcvm¨ †bB| wZwb GK| Zvui †Kv‡bv kwiK †bB|
لاَ اِلٰهَ الاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَه
Avj­vn Qvov †Kv‡bv gyw³`vZv I ÎvYKZv© †bB| mg¯— KZ…©Z¡ Zvui, mg¯— cÖksmv Zvui|
لاَ اِلٰهَ الاَّ اللهُ لَه الْمُلْكُ وَلَه الْحَمْدُ
Avj­vn Qvov †Kv‡bv dwiqv` kªeYKvix I cÖv_©bv gÄyiKvix †bB Ges Zvui mvnvh¨ Qvov Kv‡iv †Kv‡bv Dcvq DcKiY I kw³ mvg_© †bB|
لاَ اِلٰهَ الاَّ اللهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ اِلاَّ بِالله
 
6. ghv©`v DbœZKvix whK&i : GKvwaK mnxZ m~‡Î ewY©Z n‡q‡Q, im~jyj­vn mv. mvnvexMY‡K bvgv‡h Ges bvgv‡hi evB‡i GB K_v¸‡jv ej‡Z civgk© w`‡q‡Qb, †Kv‡bv mvnvex GB K_v¸‡jv D”PviY Kivi d‡j Avj­vn K‡Zv †ewk mš‘ó nb Zv AewnZ K‡i‡Qb| †m K_v¸‡jv n‡jv :
اَللهُ اَكْبَرُ كَبِرًا وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ كَثِيْرًا وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَّاصِيْلاً
A_©: ÒAvj­vn mevi †miv, me©‡kªô| mg¯— cÖksmv Avj­vn&i, wecyj wecyj cÖksmv| ΓwUnxb cweÎ gnvb Avj­vn mKvj mܨvq- me©mgq|Ó
wZiwgwh hyev‡qi iv. †_‡K eY©bv K‡ib, im~jyj­vn mv. e‡j‡Qb : cÖwZw`b †fv‡i gvbyl hLb D‡V, ZLb GKRb †d‡ikZv †W‡K e‡j †Zvgiv e‡jv :
سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسُ
A_©: ÔcyZ cweÎ gnvb mgªvU Avj­vn AwZkq cweΠΓwUgy³|Õ

তিন/চার মাস পরে আনুষ্ঠানিকভাবে খুৎবা পড়িয়ে বিবাহ


প্রশ্ন: : উভয় পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বর ও কনের মধ্যে বিবাহের কাবিননামা রেজিষ্ট্রি হয়েছে। কিন্তু সমাজের প্রথা অনুযায়ী তিন/চার মাস পরে আনুষ্ঠানিকভাবে খুৎবা পড়িয়ে বিবাহ সম্পাদন করে বৌ উঠানো হবে। এই নিয়ম কি শরীআত সম্মত?

উত্তর: উক্ত নিয়ম শরী
আত সম্মত নয়। কেননা উপরোক্ত বর্ণনা মতে বিবাহের সকল শর্ত পূরণ করা হয়েছে। কেবল খুৎবা বাকী রয়েছে, যা শর্ত নয়, বরং সুন্নাত। বিবাহের শর্ত হল চারটি। অলি, দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী, মোহরানা ও স্থায়ী উদ্দেশ্যে বিবাহ করা। বিবাহের দুটি রুকন হল ঈজাব ও কবুল। অর্থাৎ স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের স্বেচ্ছাকৃত সম্মতি এবং উভয়ে মুহরিম না হওয়া। অর্থাৎ পরষ্পরের মধ্যে বিয়ে হারাম না হওয়া। এক্ষণে যেহেতু বিবাহের সকল শর্ত ও রুকন পূর্ণ হয়েছে, সেহেতু বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেছে। তারা এখন পরষ্পরে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করতে পারে। অতএব ইচ্ছাকৃতভাবে খুৎবা ও বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা বিলম্বিত করা সামাজিক কুপ্রথা মাত্র। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

মসজিদের মধ্যে জানাযার ছালাত


প্রশ্ন : মসজিদের মধ্যে জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে কি?

উত্তর: বাইরে পড়াই সুন্নাত। তবে বিশেষ অবস্থায় মসজিদের মধ্যে জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে (মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৫৬)

আহলেহাদীছ। কিন্তু হানাফী এলাকায় আমার বসবাস


প্রশ্ন : আমি আক্বীদাগত ভাবে আহলেহাদীছ। কিন্তু হানাফী এলাকায় আমার বসবাস হওয়ায় বাধ্য হয়ে হানাফী ইমামের পিছনে জামাআতে ছালাত আদায় করতে হয়। ঐ ইমাম রাফউল ইয়াদায়েন, জোরে আমীন বলা সহ অনেক সুন্নাতই আমল করেন না। অথচ আমি সেগুলো পালন করি। এমতাবস্থায় ইমামের অনুসরণ করা হবে কি?

উত্তর: বিশুদ্ধ সুন্নাতের উপর আমল করেই ইমামের অনুসরণ করতে হবে। এতে ছালাতের কোন ক্ষতি হবে না। ছহীহ হাদীছে থাকা সত্ত্বেও যে সমস্ত আমল ইমাম ছেড়ে দিবেন মুক্তাদী হিসাবে সেগুলো আমল করা সম্ভব হ
লে তা পালন করতে হবে (বুখারী হা/৩৭৮, ৬৮৯; মুসলিম হা/৪১১, ৪১৪)। যেমন তিনি জোরে আমীন না বললে,  রাফউল ইয়াদায়েন না করলে, বুকে হাত না বাঁধলে আপনাকে তা করতে হবে। এগুলো বিশুদ্ধ সুন্নাত। কারণ রাসূল (ছা:) যেভাবে ছালাত আদায় করেছেন সেভাবেই আমাদের ছালাত আদায় করতে বলা হয়েছে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৬৮৩)। উল্লেখ্য, ছালাতে ইমামের ত্রুটি হলে তা ইমামের উপর বর্তাবে মুক্তাদীর উপর নয় (বুখারী, মিশকাত হা/১১৩৩)। আর ইমামের অনুসরণ হবে ক্বিয়াম-কুঊদ, রুকূ-সুজূদ এবং ছালাত শুরু ও শেষ করার ব্যাপারে, অন্যান্য সুন্নাত আমল করার ব্যাপারে নয়।

আমি ইসলামের বিধান মেনে চলার চেষ্টা করি।


প্রশ্ন : আমি ইসলামের বিধান মেনে চলার চেষ্টা করি। পর্দার খেলাফ হবে এই আশংকায় আমি গর্ভাবস্থায় দোআ করতাম যে, আমার প্রসব যেন অস্ত্রোপচারহীন হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে অপারেশন করতে হয়েছে এবং পরবর্তীতেও বাচ্চা নিলে অপারেশন করতে হবে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমি আর বাচ্চা নেব না। এরূপ সিদ্ধান্ত কি সঠিক হয়েছে?

উত্তর: আল্লাহ্ কারো দো
আ প্রত্যাখ্যান করেন না। বাহ্যিকভাবে কবুল না হলেও হয়ত সে দোআর মাধ্যমে আল্লাহ্ দোআকারীকে অন্য বিপদ থেকে রক্ষা করেন (ছহীহ তিরমিযী হা/৩৩৮১; মিশকাত হা/২২৩৬, সনদ হাসান)। তাই বাচ্চা না নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক নয়। এমনও হতে পারে যে, পরবর্তীতে অপারেশন নাও করতে হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে সন্তান হতে যে কষ্ট হয় অপারেশন করালে তার চেয়ে কম কষ্ট হয়। হতে পারে আপনার ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটেছে। আল্লাহ্ আপনাকে বেশী কষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন। অতএব উক্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে এবং কোন মহিলা সার্জনকে দিয়ে অপারেশন করানোর চেষ্টা করতে হবে।

তিনি একজন নবী ছিলেন


প্রশ্ন : মাসিক আত-তাহরীক অক্টোবর’০৬ সংখ্যায় বলা হয়েছে যুল কিফল বনী ইসরাঈলের একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন। ‘পবিত্র কুরআনে বর্ণিত ২৫জন নবীর কাহিনী’তে বলা হচ্ছে তিনি একজন নবী ছিলেন। কোনটি সঠিক? দলীল ভিত্তিক জবাব দানে বাধিত করবেন।

উত্তর: যুল কিফল একজন নবী ও একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন। পবিত্র কুরআনে তাকে নবীদের সাথেই উল্লে­খ করা হয়েছে (আম্বিয়া ৮৫-৮৬; ছোয়াদ ৪৮)। হাফেয ইবনু কাছীর বলেন, যুল কিফলের নবী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট (তাফসীরে ইবনে কাছীর, আম্বিয়া ৮৫)
যুল কিফল সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে দু’স্থানে বর্ণিত হয়েছে অন্যান্য নবীগণের সাথে যুক্ত করে। যেমন সূরা আম্বিয়া ৮৫-৮৬ আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِسْمَاعِيلَ وَإِدْرِيسَ وَذَا الْكِفْلِ كُلٌّ مِّنَ الصَّابِرِينَ، وَأَدْخَلْنَاهُمْ فِي رَحْمَتِنَا إِنَّهُم مِّنَ الصَّالِحِينَ- ‘আর ইসমাঈল, ইদরীস ও যুল কিফল, সকলেই ছিল ধৈর্যশীলগণের অন্তর্ভুক্ত’। ‘আর আমরা তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই তারা ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত (আম্বিয়া ৮৫-৮৬)। এ আয়াত দ্বয়ের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর বলেন, فالظاهر من السياق أنه ما قرن مع الأنبياء إلا وهو نبي- ‘পূর্বাপর সম্পর্কে এটা প্রকাশ্য যে, নবীগণের তালিকায় নবী ব্যতীত অন্যদের নাম যুক্ত হয় না’। তবে অন্যেরা কেউ বলেছেন, তিনি একজন সৎকর্মশীল ব্যক্তি ছিলেন, কেউ বলেছেন, তিনি একজন ন্যায়পরায়ন শাসক ছিলেন। ইবনু জারীর এ ব্যাপারে চুপ থেকেছেন’। কুরতুবী ও শওকানী এখানে যুল কিফল সম্পর্কিত তিরমিযী বর্ণিত দু’টি যঈফ হাদীছ উল্লে­খ করে ক্ষান্ত হয়েছেন। আহমাদ, তিরমিযী, হাকেম-এর বর্ণনায় শুধু ‘কিফল’ এসেছে। আলবানী বলেন, ‘ইনি বনু ইস্রাঈলের একজন ব্যক্তি, কুরআনে বর্ণিত যুল কিফল নন(সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০৮৩)। কুরতুবী আবু মূসা আশ‘আরী (রা:) প্রমুখাৎ রাসূলুল্লাহ (ছা:) থেকে একটি হাদীছ এনেছেন যে, إن ذا الكفل لم يكن نبيا ولكنه عبدا صالحًا ‘নিশ্চয়ই যুল কিফল নবী ছিলেন না। বরং তিনি একজন সৎকর্মশীল বান্দা ছিলেন’। অথচ হাদীছটি জাল, যার অবস্থা এই যে, لا أصل له في المرفوع بل موقوف ضعيف أخرجه الطبري وهو منقطع-  ‘এর মরফূ‘ হওয়ার অর্থাৎ রাসূল (ছা:) থেকে বর্ণিত হওয়ার কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি মওকূফ, অর্থাৎ আবু মূসার নিজস্ব উক্তি। অথচ যার সূত্র যঈফ এবং যা ইবনু জারীর স্বীয় তাফসীরে মুনক্বাতি‘ অর্থাৎ ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেছেন (তাহক্বীক্ব কুরতুবী, আম্বিয়া ৮৫)
(২) আল্ল­াহ বলেন,
وَاذْكُرْ إِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَذَا الْكِفْلِ وَكُلٌّ مِّنْ الْأَخْيَارِ ‘আর তুমি বর্ণনা কর ইসমাঈল, আল-ইয়াসা‘ ও যুল কিফল সম্পর্কে। আর তারা সকলেই ছিল উত্তম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত (ছোয়াদ ৪৮)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় কুরতুবী বলেন, أي ممن اخةير للنبوة অর্থাৎ তারা ছিলেন সেই সকল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে নবুঅতের জন্য বাছাই করা হয়েছিল’। শাওকানী স্বীয় তাফসীর ফাৎহুল ক্বাদীরে বলেন, أنهم من جملة من صبر من الأنبياء- ‘তারা হলেন সেই সকল নবীগণের অন্তর্ভুক্ত যারা বহু কষ্ট সহ্য করেছেন’। অথচ একই তাফসীর গ্রন্থের সারসংক্ষেপ ‘যুবদাতুত তাফসীর’ নামে যা প্রকাশিত হয়েছে রিয়াদ, দারুস সালাম প্রকাশনী থেকে, সেখানে বলা হয়েছে, الصحيح أنه رجل من بني إسرائيل، كان لا يتورع عن شيئ من المعاصي فتاب فغفر الله له، ليس نبي، وقال جماعة هو نبي- ‘সঠিক কথা এই যে, তিনি বনু ইস্রাঈলের একজন ব্যক্তি ছিলেন। যিনি কোন পাপের কাজে দ্বিধা করতেন না। পরে তিনি তওবা করেন। অত:পর আল্লাহ তাকে মাফ করেন। তিনি নবী নন। তবে একদল বলেছেন যে, তিনি নবী’। প্রশ্ন হ’ল, এমন একজন লোকের কথা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বিশেষভাবে নবীগণের তালিকায় বর্ণনা করবেন কেন?
আত-তাহরীক অক্টোবর ২০০৬, ১০/৩ সংখ্যার ২১/২১ প্রশ্নোত্তরে যুবদাতুত তাফসীরের বক্তব্যটুকু অনুবাদ করে দেওয়া হয়েছে মাত্র। বাড়তি তাহকীক করার প্রয়োজন মনে করা হয়নি। যেটা ভুল হয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় যে, আধুনিক মুফাসসির আবু বকর জাবের আল-জাযায়েরী স্বীয় ‘আয়সারুত তাফাসীরে’ সূরা আম্বিয়া ৮৫ আয়াতের তাফসীরের টীকায় লিখেছেন,
وأرجح الأقوال ما رواه أبو موسى رضي الله عنه عن النبي صـ أنه قال: ‘সব কথার সেরা কথা হ’ল যা বর্ণনা করেছেন আবূ মূসা (রা:) রাসূলুল্ল­াহ (ছা:) হতে’- বলেই তিনি যঈফ হাদীছটির অংশবিশেষ উদ্ধৃত করেছেন, যা মূলত: কোন হাদীছই নয়, যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে।
মোটকথা কুরআন যখন ইসমাঈল, ইদরীস, আল-ইয়াসা
প্রমুখ নবীগণের সাথে যুল কিফলের নাম একসাথে বর্ণনা করেছে, তখন তিনি নবী ছিলেন, এ বিশ্বাসই রাখতে হবে। এর বিপরীতে কোন বিশুদ্ধ দলীল নেই। এগুলি ইহুদীদের মিথ্যা রটনা হওয়াও বিচিত্র নয়।
উল্লেখ্য যে, ইবনু কাছীর সূরা নেসা ১৬৪ আয়াতের তাফসীরে ‘যুল কিফল’ সহ ২৫জন নবীর তালিকা দিয়েছেন (ঐ, ১/৫৯৯ পৃ:)। কুরতুবী সূরা আম্বিয়া ৮৫ আয়াতের তাফসীরে বলেছেন,
والجمهور على أنه ليس بنبي জমহূর বিদ্বানগণের মতে তিনি নবী ছিলেন না। কিন্তু সূরা ছোয়াদ ৪৮ আয়াতের তাফসীরে তিনি তাকে নবীগণের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। আসলে জমহূর পরিভাষাটি অনেক সময় ভেক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কুরতুবী, ইবনু কাছীর, শাওকানী প্রমুখ মুফাসসিরগণকে বাদ দিয়ে আর কাদেরকে জমহূর বলা হবে? আল্ল­াহ সর্বাধিক অবগত।