সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০১১

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত - ২


জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত
প্রথম অধ্যায়

পবিত্রতা (ওযূ ও তায়াম্মুম)
ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে (ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৭।) এবং
পবিত্রতা ছালাতের চাবি বলেও ঘোষণা করেছে। (ছহীহ আবূদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩, ১/৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৩১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ২/৫১ পৃঃ।) তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে ছালাতের ওযূর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কারণ ওযূ না হলে ছালাত হবে না। (ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১, ১/১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯, পৃঃ ৩২; মিশকাত হা/৪০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০, ২/৮২, ওযূর সুন্নাত সমূহ অনুচ্ছেদ।) তাই ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো আমাদেরকে বর্জন করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ করতে হবে।


(১) মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ:
শরী
আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল। যেমন:
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم تَفْضُلُ الصَّلاَةُ الَّتِى يُسْتَاكُ لَهَا عَلَى الصَّلاَةِ الَّتِى لاَ يُسْتَاكُ لَهَا سَبْعِينَ ضِعْفًا.
আয়েশা (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয় সেই ছালাত মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়। (বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ৬১-৬২; হাকেম হা/৫১৫; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৮৯।)


তাহক্বীক্ব: ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন,
وَقَدْ رَوَاهُ مُعَاوِيَةُ بْنُ يَحْيَى الصَّدَفِىُّ عَنِ الزُّهْرِىِّ وَلَيْسَ بِالْقَوِىِّ وَرُوِىَ مِنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَمَنْ وَجْهٍ آخَرَ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ وَكِلاَهُمَا ضَعِيْفٌ وَفِىْ طَرِيْقِ الْوَجْهِ الْآخِرِ عَنْ عُرْوَةَ الْعَاقِدِىِّ وَ هُوَ كَذَّابٌ.
মু
আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে কিন্তু সে মিথ্যুক। (আলবানী, মিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ।)


رَكْعَتَانِ بِسِوَاكٍ أَفْضَلُ مِنْ سَبْعِيْنَ رَكْعَةً بِغَيْرِ سِوَاكٍ
মিসওয়াক করে দুই রাক
আত ছালাত আদায় করা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাকআত ছালাত পড়ার সমান। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩; মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ।)


উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত মুন্তাখাবে হাদীস গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করেছেন। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম। (ঐ, মুন্তাখাব হাদীস, অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মাদ সাআদ ছাহেব (ঢাকা: দারুল কুতুব, দ্বিতীয় প্রকাশ: আগস্ট ২০১০), পৃঃ ২৯৯।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, মুআবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে সে মিথ্যুক। (لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف  সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃ; যঈফুল জামে আছ-ছাগীর হা/৩১২৭।)

عَنْ زَيْدِ بنِ خَالِدٍ الْجُهَنِيِّ قَالَ مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْرُجُ مِنْ شَيْءٍ لِشَيْءٍ مِنَ الصَّلَوَاتِ حَتَّى يَسْتَاكَ .
যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) ছালাত সমূহের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না। (দারাকুৎনী হা/১৫২৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩।)
 
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فِى السِّوَاكِ عَشْرُ خِصَالٍ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ تَعَالَى وَمَسْخَطَةٌ لِلشَّيْطَانِ وَمَفْرَحَةٌ لِلْمَلاَئِكَةِ جَيِّدٌ لِلَّثَةِ وَيُذْهِبُ بِالْحَفْرِ وَيَجْلُو الْبَصَرَ وَيُطَيِّبُ الْفَمَ وَيُقَلِّلُ الْبَلْغَمَ وَهُوَ مِنَ السُّنَّةِ وَيَزِيْدُ فِى الْحَسَنَاتِ.
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূরে করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ কম করে (৯) এটি সুন্নাত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে। (দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মুআল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী। (مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ -দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।)
 
عَنِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ وَمَجْلاَةٌ ِللْبَصَر.ِ
ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়। (তাবারাণী, আল-মু
জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। (
لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم  -আল-মুজামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬।)


عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَسَوَّكُوْا فَإِنَّ السِّوَاكَ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ مَا جَاءَنِيْ جِبْرِيْلُ إِلَّا أَوْصَانِي بِالسِّوَاكِ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ يُفْرَضَ عَلَيَّ وَعَلَى أُمَّتِي وَلَوْلاَ أَنِّي أَخَافُ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَفَرَضْتُهُ لَهُمْ وَإِنِّي لَأَسْتَاكُ حَتَّى لَقَدْ خَشِيْتُ أَنْ أُحْفِيَ مَقَادِمَ فَمِيْ.
আবু উমামা (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন। এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না। আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম। আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব। (যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯, পৃঃ ২৫; আহমাদ হা/২২৩২৩; তাবরানী, কবীর হা/৭৭৯৬; মিশকাত হা/৩৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬, ২/৭৫ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৮।)

 
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন, নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন। (
علي بن زيد أبو عبد الملك الألهاني الدمشقي قال فيه البخاري منكر الحديث، وقال ابن حاتم الرازي ضعيف الحديث، أحاديثه منكرة،  মুগাল্লাত্বঈ, শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব: মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায, ১৪১৯ হিঃ), ১/৬২ পৃঃ।)

 
عَنْ أَبِي أَيُّوْبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعٌ مِنْ سُنَنِ الْمُرْسَلِيْنَ الْحَيَاءُ وَالتَّعَطُّرُ وَالسِّوَاكُ وَالنِّكَاحُ.
আবু আইয়ুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা। (যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০, ১/২০৬; মিশকাত হা/৩৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২, ২/৭৪ পৃঃ,
মিসওয়াক করা অনুচ্ছেদ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।)


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর
আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন। (মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫/১৯৮৫), হা/৭৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৭।)

 
(২) যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযীলতপূর্ণ:
যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نِعْمَ السِّوَاكُ الزَّيْتُوْنُ مِنْ شَجَرةٍ مُبارَكَةٍ  يُطَيِّبُ الْفَمَ ويُذْهِبُ الحَفْرَ  وَهُوَ سوَاكِيْ وسِوَاكُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِيْ.
মু
আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, উত্তম মিসওয়াক হল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে, দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক। (তাবারাণী, আল-আওসাত, হা/৬৮৯।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন। (আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৯/৩৭১ পৃঃ।) ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে, সে চরম মিথ্যাবাদী। (
فيه محمد بن محصن العكاشي  وهو كذاب সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০।)


عَنْ أَبِي خَيْرَةَ الصَّبَّاحِيِّ قَالَ كُنْتُ فِي الْوَفْدِ الَّذِيْنَ أَتَوْا رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ عَبْدِ الْقَيْسِ فَزَوَّدَنَا الأَرَاكَ نَسْتَاكُ بِهِ، فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللَّهِ عِنْدَنَا الْجَرِيدُ وَلَكِنَّا نَقْبَلُ كَرَامَتَكَ وَعَطِيَّتَكَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِعَبْدِ الْقَيْسِ إِذْ أَسْلَمُوْا طَائِعِيْنَ غَيْرَ مُكْرَهِيْنَ إِذْ قَعَدَ قَوْمِي لَمْ يُسْلِمُوْا إِلا خَزَايَا مَوْتُوْرِيْنَ.
আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য তিনি আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তার দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান আমরা গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। (তাবারাণী কবীর হা/১৮৩৫৯; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাউদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুকাতিল বিন হুমামও অপরিচিত। (ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ।)

 
(৩) আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট:
মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَجْزِئ مِنَ السِّوَاكِ الْأَصَابِعُ.
আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট। (বায়হাক্বী ১/৪০, ইবনু আদী ৫/৩৩৪।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে দুর্বল। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে। (اتفقوا على تضعيفه ، بل اتهمه الدارقطني بالوضع সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১; ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯; যঈফুল জামে হা/৬৪১৫।)


(৪) ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক না করা:
উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে। (ছহীহ বুখারী হা/১৯৩৪, ১/২৫৯ পৃঃ,
ছিয়াম অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-২৭।)


মিসওয়াক সম্পর্কে ছহীহ হাদীছ :
عَنْ عَائِشَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
মিসওয়াক হল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ।(ছহীহ নাসাঈ হা/৫, ১/৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৮১; বঙ্গানুবাদ হা/৩৫১, ২/৭৪ পৃঃ; ইরওয়া হা/৬৬।)

 
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ُأَنَّهُ أَمَرَ بِالسِّوَاكِ وَقَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا تَسَوَّكَ ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي قَامَ الْمَلَكُ خَلْفَهُ فَتَسَمَّعَ لِقِرَاءَتِهِ فَيَدْنُو مِنْهُ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيهِ فَمَا يَخْرُجُ مِنْ فِيهِ شَيْءٌ مِنَ الْقُرْآنِ إِلاَّ صَارَ فِي جَوْفِ الْمَلَكِ فَطَهِّرُوا أَفْوَاهَكُمْ لِلْقُرْآنِ.
আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি  ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয় তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ।(আবুবাকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ।) উল্লেখ্য, মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীছ রয়েছে।


(৫) মাথায় টুপি দিয়ে বা মাথা ঢেকে টয়লেটে যাওয়া:
পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় মাথায় টুপি দেওয়া বা মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রথা সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা জাল।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ غَطَّى رَأْسَهُ وَإِذَا أَتَى أَهْلَهُ غَطَّى رَأْسَهُ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন তখন তাঁর মাথা ঢেকে নিতেন এবং যখন স্ত্রী সহবাস করতেন তখনও মাথা ঢাকতেন। (বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৪৬৪।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কাদীমী নামক রাবী রয়েছে সে এই হাদীছ জাল করেছে। এছাড়া তার শিক্ষক আলী ইবনু হাইয়ান আল-মাখযূমীকে ইবনু হাজার আসক্বালানী মাতরূক বলেছেন। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯২।)


(৬) পানি থাকা সত্ত্বেও কুলুখ নেওয়া অথবা কুলুখ নেওয়ার পর পুনরায় পানি নিয়ে ইস্তিঞ্জা করা:
পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরী
আত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে। তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না। কুলুখ নেওয়ার পর পানি নেওয়া সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণনা করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسِ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ فَسَأَلَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَقَالُوْا نَتَّبِعُ الْحِجَارَةَ الْمَاءَ.
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
এতে এমন লোক সকল রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসেন। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন (তওবা ১০৮)। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, (আমরা ইস্তিঞ্জা করার সময়) পাথর নেওয়ার পর পানি নেই।


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। হাদীছের গ্রন্থ সমূহে এই বর্ণনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১-এর ভাষ্য দ্রঃ।) ইমাম বাযযার এটি বর্ণনা করে বলেন, যুহরী থেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযীয ছাড়া অন্য কেউ একে বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। আর সে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছে। ((لا نعلم أحدا رواه عن الزهري الا محمد بن عبد العزيز ولا عنه الا ابنه) - তালখীছ, পৃঃ ৪১, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।)
 
ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,
عمر بن عبد العزيز ضعفه أبو حاتم فقال ليس له ولا لأخويه عمران وعبد الله حديث مستقيم وعبد الله بن شبيب ضعيف أيضا.
ওমরকে আবু হাতেম দুর্বল বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তার ও তার দুই ভাই ইমরান ও আব্দুল্লাহ কারো একটি হাদীছও সঠিক নয়। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীবও দুর্বল। (ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ফী আহাদীছির রাফইল কাবীর হা/১৫১; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।)

 
উক্ত বর্ণনার বিরোধী ছহীহ হাদীছ:
উক্ত হাদীছ যে জাল তার বাস্তব প্রমাণ হ
ল নিম্নের ছহীহ হাদীছ। যেখানে পাথরের কথাই নেই।
 عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا قَالَ كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيهِمْ هَذِهِ الآيَةُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এই আয়াতটি কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
এতে এমন লোক সকল রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসেন (তওবা ১০৮)। তিনি বলেন, তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত। (আবূদাঊদ হা/৪৪, ১/৭ পৃঃ, পবিত্রতা অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-২৩, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৬৭৩।)


অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبىْ أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُوْرِ فَمَا طُهُورُكُمْ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ وَنَغْتَسِلُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ قَالَ فَهُوَ ذَاكَ فَعَلَيْكُمُوْهُ.
আবু আইয়ুব আনছারী, জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়-
তথায় (কুবায়) এমন লোক সকল রয়েছে যারা পবিত্রতা লাভ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাদের পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করলেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন কর? তারা বলল, আমরা ছালাতের জন্য ওযূ করে থাকি, অপবিত্রতা হতে গোসল করে থাকি এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটাই তার কারণ। সুতরাং তোমরা সর্বদা এটা করতে থাকবে। (ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৫৫, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৪১, পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ; আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১, ৩/১১৩ পৃঃ।)

 
মূল কথা হ
ল অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরা শুধু পাথর দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত কিন্তু কোবাবাসী অন্যদের তুলনায় শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। সে জন্যই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।


আরেকটি জাল হাদীছ:
عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَتَّبِعُوْا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ مِنْ أَثَرِ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ فَإِنِّيْ أَسْتَحْيِيْهِمْ وَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كاَنَ يَفْعَلُهُ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন,
তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও তারা যেন পেশাব-পায়খানার সময় পাথর নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। আর রাসূল (ছাঃ)ও এটা করেন। (ইরওয়াউল গালীল হা/৪২।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। এ শব্দে কোন বর্ণনা নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই। (ইরওয়াউল গালীল ১/৮২ পৃঃ।)
উক্ত বর্ণনার বিরোধী সরাসরি ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কুলুখ নেওয়ার কথা নেই; বরং শুধু পানি নেওয়ার কথা রয়েছে। যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَسْتَطِيْبُوا بِالْمَاءِ فَإِنِّي أَسْتَحْيِيهِمْ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُهُ.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও তারা যেন পানি দ্বারা পবিত্রতা হাছিল করে। কারণ আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করে থাকেন। (ছহীহ তিরমিযী হা/১৯, ১/১১ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৬, ১/৮ পৃঃ।)


অতএব সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উক্ত মিথ্যা প্রথাকে অবশ্যই উচ্ছেদ করতে হবে। পানি থাকা সত্ত্বেও যেন কোন স্থানে কুলুখের স্তূপ সৃষ্টি না হয়। কারণ প্রকৃত ফযীলত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার মধ্যেই রয়েছে।

[চলবে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন