বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ


আলেমগণের মধ্যে মতভেদের কারণ
(১মকিস্তি)
হামদ ও ছানার পর- এই বিষয়টি অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করতে  পারে। কেউ বলতে পারে, শরী‘আতের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় থাকতে কেন এই বিষয়ে আলোচনার অবতারণা? উত্তরে বলব, এই বিষয়টি বিশেষ করে বর্তমান যুগে অনেকের চিন্তা-চেতনাকে ব্যস্ত রেখেছে। আমি শুধু সাধারণ মানুষের কথাই বলছিনা; বরং জ্ঞানপিপাসুরাও এর অন্তর্ভুক্ত। আর এর মৌলিক কারণ হচ্ছে, বর্তমান প্রচার মাধ্যম গুলিতে শরী‘আতের বিধিবিধানের প্রচার ও প্রসার ব্যাপক আকারে বেড়ে গেছে এবং মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। আর একজনের কথার সাথে অন্যের কথার অমিল থাকায় বিশৃংখলা সৃষ্টি হচ্ছে এবং অনেকের মধ্যে সন্দেহের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বিশেষত সাধারণ মানুষ যারা মতভেদের উৎস অবগত নয়।

আমি মনে করি, মুসলমানদের নিকটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি এবং এবিষয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি।

এই উম্মতের উপর আল্লাহর বড় নেয়ামত হল এই যে, দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদি এবং মূল উৎস গুলি নিয়ে তাদের মাঝে কোন মতভেদ নেই; বরং এমন কিছু বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, যা মুসলমানদের প্রকৃত ঐক্যে আঘাত হানে না। আর সাধারণত এসব মতভেদ অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। মৌলিক যে বিষয়গুলি আমি আলোচনা করতে চাই, তা সংক্ষিপ্তাকারে নীচে তুলে ধরা হ’ল-

প্রথমতঃ পবিত্র কুরআন ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের বক্তব্য অনুযায়ী সকল মুসলমানের নিকট সুবিদিত বিষয় হ’ল আল্লাহপাক মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে হেদায়াত এবং সঠিক দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন। একথার অর্থ হ’ল রাসূল (ছাঃ) এই দ্বীন সুস্পষ্ট ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করে গেছেন, যার পরে আর বর্ণনার প্রয়োজন নেই। কেননা হেদায়াতের অর্থ হচ্ছে যাবতীয় পথভ্রষ্টতাকে দূরীভূত করা। আর সঠিক দ্বীনের অর্থ যাবতীয় বাতিল দ্বীনের উচ্ছেদ, যেদ্বীন গুলির প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। আর রাসূল (ছাঃ) এই হেদায়াত এবং সঠিক দ্বীন নিয়েই প্রেরিত হয়েছেন। রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মতপার্থক্য হ’লে ছাহাবায়ে কেরাম তাঁর কাছেই ফিরে যেতেন। ফলে তিনি তাঁদের মাঝে সঠিক ফায়ছালা করতেন এবং তাঁদেরকে হক্ব বলে দিতেন- চাই সেই মতানৈক্য আল্লাহর নাযিলকৃত বাণীর বিষয় নিয়েই হোক কিংবা এখন ও অবতীর্ণ হয়নি এমন কোন বিধান সম্পর্কে হোক। অতঃপর পরবর্তীতে সেই বিধান বর্ণনা করতঃ কুরআন অবতীর্ণ হ’ত। পবিত্র কুরআনের কত আয়াতেই না আমরা পড়ে থাকি, ‘তারা আপনাকে অমুক বিষয়ে জিজ্ঞেস করে’। এক্ষেত্রে আল্লাহ পরিপূর্ণ জওয়াব সহ তাঁর নবী (ছাঃ)-এর  প্রতি অহি নাযিল করতেন এবং তা মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে তাঁকে নির্দেশ দিতেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তাদের জন্য কি কি হালাল করা হয়েছে? তুমি বলে দাও, পবিত্র জিনিস গুলি তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তোমরা যে সমস্ত পশু-পাখি কে শিকার করা শিক্ষা দিয়েছ, যেভাবে আল্লাহ তোমাদের কে শিক্ষা দিয়েছেন। তারা যা শিকার করে আনে, তা তোমরা খাও এবং এগুলি কে শিকারের জন্য পাঠানোর সময় ‘বিসমিল্লাহ বল। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর’ (মায়েদাহ৪)

‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তারা কি ব্যয় করবে? তুমি বল, তোমাদের উদ্বৃত্ত জিনিস। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বর্ণনা করেন, যেন তোমরা চিন্তা কর’ (বাক্বারাহ২১৯)

‘(হে নবী!) লোকেরা তোমাকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে? তুমি বলে দাও, যুদ্ধলব্ধ সম্পদ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। অতএব তোমরা এ ব্যাপারে আল্লাহকে ভয়কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর। আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তাহ’লে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’ (আনফাল১)

‘তারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে?তুমি বল, উহা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময় নিরূপক। আর তোমরা যে পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর, সেটি পুণ্যের কাজ নয়; বরং পুণ্যের কাজ হ’ল যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করল। তোমরা দরজা দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার (বাক্বারাহ১৮৯)

‘তারা তোমাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে।তুমি বল, এতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়। কিন্তু আল্লাহর পথে বাধা দান করা, আল্লাহকে অস্বীকার, মসজিদুল হারামে বাধা দেওয়া এবং উহার বাসিন্দা দেরকে সেখান থেকে বহিষ্কার করা আল্লাহর নিকট আরো গুরুতর অপরাধ। হত্যা অপেক্ষা ফিৎনা-ফাসাদ গুরুতর অন্যায়। আর তারা যদি সক্ষম হয়, তাহ’লে তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন হ’তে ফিরাতে না পারা পর্যন্ত তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি স্বধর্ম হ’তে ফিরে যায় এবং কাফির অবস্থাতেই মারা যায়, তাহ’লে তাদের ইহকাল ও পরকালে সমস্ত আমলই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আর তারাই হ’ল জাহান্নামী এবং তারই মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে (বাক্বারাহ২১৭)

এ জাতীয় আরো বহু আয়াত রয়েছে (যেগুলিতে এরকম প্রশ্নোত্তর উদ্ধৃত হয়েছে)। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর উম্মতে মুহাম্মাদী শরী‘আতের এমন সব বিধি বিধানের ক্ষেত্রে মতভেদ করেছে, যা শরী‘আতের মৌলিক বিষয়াবলী এবং মূল উৎস গুলির ক্ষেত্রে কাম্য নয়। তবে তা তো এক ধরনের মতভেদ। তাই এই মতভেদের কতিপয় কারণ আমরা বর্ণনা করতে যাচ্ছি।

আমরা সবাই নিশ্চিত ভাবে জানি যে, ইলমে, আমানতদারিতায় এবং দ্বীনদারিতায় বিশ্বস্ত এমন কোন আলেমকে পাওয়া যাবে না, যিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ্‌ নির্দেশিত বিষয়ের বিরোধিতা করেন। কেননা যিনি সত্যিকার অর্থে ইলম এবং দ্বীনদারিতার বিশেষণে বিশেষিত হয়েছেন, তাঁর লক্ষ্যই হচ্ছে হক্ব অন্বেষণ। আর যার লক্ষ্য হক্ব অন্বেষণ, আল্লাহ তার জন্য তা সহজ করে দেন। এরশাদ হচ্ছে,

‘আর আমি কুরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?(ক্বামার১৭)
অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,  ‘সুতরাং কেউ দান করলে, তাক্বওয়া অবলম্বন করলে এবং সদ্বিষয়কে সত্য জ্ঞান করলে অচিরেই আমি তার জন্য সহজ পথকে সুগম করে দেব (লায়ল৫-৭)

তবে আলেম নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহর বিধিবিধানের ক্ষেত্রে তার ভুল-ত্রুটি হ’তেই পারে, শরী‘আতের মূল উৎসে নয়। যে ব্যাপারে আমরা পূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছি। এ ভুলটা অবশ্যম্ভাবী একটি বিষয়। কেননা আল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী মানুষের গুণ হচ্ছে,  ‘আর মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে (নিসা২৮)

সুতরাং মানুষ ইলম ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে দুর্বল। অনুরূপ ভাবে ইলমকে আয়ত্তে আনা এবং তাতে গভীরতা অর্জনের ক্ষেত্রেও সে দুর্বল। সে জন্য কিছু কিছু বিষয়ে তার ভুল-ত্রুটি অবশ্যই হবে। আলেমগণের মধ্যে এসব ভুল-ত্রুটির কারণ ২/১টি নয়; বরং সেগুলি কূল-কিনারা বিহীন সাগরের মত। বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ এসব কারণ বিস্তারিত জানেন। এক্ষণে আমরা কারণ গুলি নীচের সাতটি পয়েন্টে সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

প্রথম কারণ : কোন বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ কারীর কাছে দলীল না পৌঁছা
এই কারণটি ছাহাবী গণের পরবর্তী যুগের মানুষের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ নয়; বরং ছাহাবী এবং তৎপরবর্তীদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে আমরা ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ঘটে যাওয়া দু’টি উদাহরণ পেশ করব।

প্রথম উদাহরণ : আমরা ছহীহ বুখারী এবং অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হাদীছ সম্পর্কে জানি যে, আমীরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) যখন সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন এবং পথিমধ্যে তাঁকে বলা হল সেখানে মহামারী দেখা দিয়েছে, তখন তিনি থেমে গেলেন এবং ছাহাবী গণের সাথে পরামর্শ করতে লাগলেন। তিনি মুহাজির ও আনছার গণের সাথে পরামর্শ করলেন এবং তাঁরা এ বিষয়ে ভিন্ন দুটি মত পোষণ করলেন। তবে প্রত্যাবর্তনের অভিমতটিই ছিল বেশী অগ্রাধিকার যোগ্য। মত বিনিময় সভার একপর্যায়ে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) আসলেন। তিনি তার কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার জ্ঞান রয়েছে, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে, তখন সেখানে প্রবশে করবে না। কিন্তু যদি তা তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে তোমরা বেরিয়ে যাবে না।(বুখারীহা/৫৭২৯ চিকিৎসা অধ্যায়; মুসলিমহা/২২১৯ সালাম অধ্যায়।)
বুঝা গেল, মুহাজির ও আনছারের বড় বড় ছাহাবীর (রাঃ) এই বিধান অজানা ছিল।অতঃপর আব্দুর রহমান (রাঃ) এসে তাঁদেরকে এই হাদীছটি সম্পর্কে খবর দিলেন।

দ্বিতীয় উদাহরণ : আলী বিন আবু তালেব (রাঃ) এবং আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)-এর মতে, কোন গর্ভবতীর স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে চার মাস দশদিন অথবা বাচ্চা প্রসবের দিন- এই দুই সময়ের মধ্যে দীর্ঘতম সময় পর্যন্ত সে ইদ্দত পালন করবে। অতএব যদি সে চার মাস দশ দিনের আগে বাচ্চা প্রসব করে, তাহ’লে তাঁদের নিকট তার ইদ্দত পালনের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। [অর্থাৎ বাচ্চা প্রসব সত্ত্বেও তাকে ইদ্দত পালন অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে চার মাস দশ দিন দীর্ঘতম সময়]। আর যদি বাচ্চা প্রসবের আগে চার মাস দশ দিন শেষ হয়ে যায়, তাহ’লে বাচ্চা প্রসব করা পর্যন্ত সে ইদ্দত পালন করতে থাকবে। [যেহেতু এক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের সময় হচ্ছে দীর্ঘতম সময়]। কেননা আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, ‘আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত (তালাক্ব৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তারা (বিধবাগণ) চারমাস দশদিন অপেক্ষা করবে (বাক্বারাহ২৩৪)
উক্ত আয়াতদ্বয়ের মধ্যে ‘আম-খাছ ওয়াজ্‌হী এর সম্পর্ক। আর এমন সম্পর্কযুক্ত দুই আয়াতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের পদ্ধতি হ’ল এমন ভাবে হুকুম গ্রহণ করতে হবে, যাতে উভয় আয়াত বা হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে। তবে তা করতে গেলে আলী ও ইবনু আববাস (রাঃ)- এর পদ্ধতি মেনে নেওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।

কিন্তু সুন্নাত এসবের ঊর্ধ্বে। সুবায়আ আল-আসলামিইয়া (রাঃ)-এর হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, তিনি (সুবায়আ) স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক দিন পর সন্তান প্রসব করেন। এরপর রাসূল (ছাঃ) তাঁকে (আবার) বিয়ে করার অনুমতি দেন।(বুখারী হা/৫৩১৮-২০; মুসলিম হা/১৪৮৪ তালাক্ব অধ্যায়।) এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আমরা সূরা ত্বালাকের উক্ত আয়াতের অনুসরণ করব। আর এই আয়াতে আল্লাহর সাধারণ ঘোষণা হচ্ছে, আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত
আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, যদি এই হাদীছ আলী ও ইবনু আববাস (রাঃ) পর্যন্ত পৌঁছত, তাহ’লে তাঁরা নিশ্চয়ই তা মেনে নিতেন এবং নিজেদের মত ব্যক্ত করতেন না।

দ্বিতীয় কারণ : ভিন্নমত পোষণকারীর নিকট হাদীছ পৌঁছা, কিন্তু হাদীছের বর্ণনাকারীর প্রতি তার অনাস্থা প্রকাশ এবং হাদীছটিকে তার চেয়ে বেশী শক্তিশালী হাদীছের বিরোধী মনে করা
ফলে তার দৃষ্টিতে যেটি শক্তিশালী মনে হয়েছে, সেটিকেই  তিনি গ্রহণ করেছেন। এখন আমরা স্বয়ং ছাহাবীগণের মধ্যে ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা দিয়ে উদাহরণ পেশ করব।

ফাতিমা বিনতু ক্বায়স (রাঃ)-কে তাঁর স্বামী তিন ত্বালাকের সর্বশেষ ত্বালাক দিয়েদেন। অতঃপর তিনি তাঁর [ফাতিমার] নিকট তাঁর [ফাতিমার স্বামীর] প্রতিনিধির মাধ্যমে কিছু যব ইদ্দতকালীন সময়ে তাঁর খোরপোষ হিসাবে পাঠান। কিন্তু ফাতিমা বিনতু ক্বায়স (রাঃ) এতে ক্রোধান্বিত হন এবং তা নিতে অস্বীকার করেন। অতঃপর একপর্যায়ে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে যান এবং রাসূল (ছাঃ) উক্ত মহিলাকে এমর্মে খবর দেন যে, তাঁর জন্য স্বামীর পক্ষ থেকে ভরণপোষণের কোন খরচ নেই এবং নেই কোন আবাসন ব্যবস্থা।(মুসলিম হা/১৪৮০ তালাক্ব অধ্যায়।) কেননা তিনি [ফাতিমার স্বামী]  তাঁর স্ত্রীকে বায়েন ত্বালাক দিয়ে দিয়েছেন। আর বায়েন ত্বালাক প্রাপ্তার ভরণপোষণ ও আবাসনের দায়িত্ব তার স্বামীর উপর থাকে না। তবে যদি ঐমহিলা গর্ভবতী হয়, [তাহলে খোরপোষ ও আবাসন দুটিই দিতে হবে]।এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেন,  তারা গর্ভবতী থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে (তালাক্ব৬)

ওমর (রাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও জ্ঞানের কথা বলার অবকাশ নেই। অথচ তাঁর মত বিজ্ঞ মানুষের এই হাদীছটি অজানা ছিল। সেজন্য ঐ মহিলার খোরপোষ ও আবাসনের পক্ষে তিনি মত দিয়েছিলেন এবং ফাতিমা (রাঃ) ভুলে গেছেন- এই সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে তাঁর হাদীছ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন, ‘একজন মহিলার কথার উপর ভিত্তি করে আমরা কি আমাদের প্রতিপালকের কথা পরিত্যাগ করব, অথচ আমরা জানিনা যে, তার মনে আছে না-কি ভুলে গেছে’? অর্থাৎ আমীরুল মুমিনীন ওমর (রাঃ) এই দলীলের প্রতি আস্থাশীল হ’তে পারেন নি। এরূপ ঘটনা যেমন ওমর (রাঃ), অন্যান্য ছাহাবীগণ এবং তাবেঈন-এর ক্ষেত্রে ঘটেছে, তেমনি ভাবে তাবে‘ তাবেঈন-এর ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এমনিভাবে আমাদের যুগেও অনুরূপ ঘটছে; বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষ কোন কোন দলীলের বিশুদ্ধতার উপর এভাবে অনাস্থাশীল হ’তে থাকবে। বিদ্বানগণের কত অভিমতের পক্ষেই তো আমরা হাদীছ দেখতে পাই। কিন্তু কেউ কেউ সেই হাদীছকে ছহীহ জেনে ঐ অভিমত গ্রহণ করেন। আবার কেউ কেউ রাসূল (ছাঃ) থেকে ঐ হাদীছের বর্ণনার প্রতি আস্থাশীল না হয়ে তাকে যঈফ মনে করতঃ ঐ অভিমত গ্রহণ করেন না।
[চলবে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন