শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত – ৮


জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত

মসজিদ সমূহ
(১) মসজিদের ফযীলত সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ যঈফ হাদীছ :
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার নিকট আমার উম্মতের ছওয়াবসমূহ পেশ করা হ
ল, এমনকি খড়-কুটার ছওয়াবও, যা কেউ মসজিদ হতে বাইরে ফেলে দেয়। এভাবে আমার নিকট পেশ করা হল আমার উম্মতের গুনাহ সমূহ, তখন আমি এই গুনাহ অপেক্ষা বড় কোন গুনাহ দেখিনি যে, কোন ব্যক্তিকে কুরআনের একটি সূরা অথবা একটি আয়াত দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর সে তা ভুলে গেছে। (তিরমিযী হা/২৯১৬; আবুদাঊদ হা/৪৬১; মিশকাত হা/৭২০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৬৭, ২/২২২ পৃঃ; মিশকাতে বর্ণিত যঈফ ও জাল হাদীছ সমূহ হা/১৪৩, ১/৭৪ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। (যঈফ তিরমিযী হা/২৯১৬; যঈফ আবুদাউদ হা/৪৬১।) উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুরাইজ নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছে। (আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ, পৃঃ ১১৭, হা/১৫৮।) আলী ইবনুল মাদীনী এই বর্ণনাকে মুনকার বলেছেন। (তুহফাতুল আশরাফ ৩/৩১৭ পৃঃ।)

আবু উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, ইয়াহুদীদের একজন আলেম নবী করীম (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, যমীনের মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? রাসূল (ছাঃ) নীরব থাকলেন এবং বললেন, তুমি নীরব থাক যতক্ষণ জিবরীল (আঃ) না আসেন। অতঃপর সে নীরব থাকল এবং জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আঃ) উত্তরে বললেন, জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞেস করব। অতঃপর জিবরীল (আঃ) বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)! আমি আল্লাহর এত নিকটে হয়েছিলাম, যত নিকটে ইতিপূর্বে হইনি। রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, কিরূপে ও কত নিকটে হয়েছিলেন? তিনি বললেন, তখন আমার মধ্যে ও তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাযার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ্ তা
আলা বলেছেন, যমীনের নিকৃষ্টতর স্থান বাজারসমূহ এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদমূহ।( ইবনু হিববান হা/১৫৯৯; মিশকাত হা/৭৪১; বঙ্গানুবাদ  মিশকাত হা/৬৮৫, ২/২২৯ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। (ইবনু হিববান হা/১৫৯৯; যঈফ আত-তারগীব হা/২০১।) উক্ত বর্ণনার সনদে ওছমান ইবনু আব্দুল্লাহ নামে একজন রাবী আছে। সে জাল হাদীছ বর্ণনা করত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৫০০।) তবে এ প্রসঙ্গে নিম্নের হাদীছটি ছহীহ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদ সমূহ আর সর্বনিকৃষ্ট স্থান হল বাজার সমূহ।( ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬, মসজিদ সমূহ অধ্যায়; মিশকাত হা/৬৯৬।)
 
ইবনু ওমর (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, জুমআ মসজিদে ফরয ছালাত আদায় করা শ্রেষ্ঠ হজ্জের সমপরিমাণ ছওয়াব। আর নফল ছালাত আদায় করা কবুল হজ্জের সমপরিমাণ ছওয়াব। আর অন্যান্য মসজিদের চেয়ে জুমআ মসজিদে ছালাত আদায়ের ছওয়াব পাঁচশ ছালাতের সমান করা হয়েছে। (তাবারাণী কাবীর ১১/১৪৭ পৃঃ; তাবারাণী আওসাত হা/১৭১।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি অত্যন্ত যঈফ। এর সনদে ইউসুফ ইবনু যিয়াদ নামে যঈফ রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন এবং ইমাম দারাকুৎনী তাকে বাতিলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০৬, ৮/২৭৭।)
 
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মসজিদগুলো ব্যতীত সমগ্র যমীন ধ্বংস হয়ে যাবে। সেগুলো একটি আরেকটির সাথে জোটবদ্ধ থাকবে। (তাবারাণী আওসাত হা/৪০০৯।) উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার সাথে যোগ করে বিভিন্ন বক্তারা বলে থাকেন, মসজিদের মুছল্লীরা যতক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ না করবে ততক্ষণ তারাও জান্নাতে যাবে না বা ধ্বংস হবে না। উক্ত বক্তব্য বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে আছরাম ইবনু হাওশাব আল-হামদানী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৬৫, ২/১৮৫ পৃঃ।)

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
তোমরা যখন জান্নাতের বাগানের পাশ দিতে অতিক্রম করবে তখন ফল খাবে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, মসজিদ সমূহ। আমি আবার বললাম, ফল কী? তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার। (তিরমিযী হা/৩৫০৯, দোআ সমূহ অধ্যায়; মিশকাত হা/৭২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৭৪।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে হামীদ ইবনু আলক্বামা নামে একজন অপরিচিত রাবী আছে। সে দুর্বল। (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৭১০, ৬/২৩৩ পৃঃ ও হা/৩৬৫০।)

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সাত স্থানে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন- আবর্জনা ফেলার স্থানে, যবেহখানায়, কবরস্থানে, পথিমধ্যে, গোসলখানায়, উটশালায় এবং বায়তুল্লাহর ছাদে। (তিরমিযী হা/৩৪৬; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৬; মিশকাত হা/৭৩৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৮২, ২/২২৮ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে যায়েদ ইবনু জুবাইরাহ নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (যঈফ তিরমিযী হা/৩৪৬; যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৭৪৬; ইরওয়া হা/২৮৭, ১/৩১৯।) ইবনু মাজার সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু ছালেহ রয়েছে। সেও যঈফ। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৭৩৮, ১/২২৯ পৃঃ।)


উল্লেখ্য যে, কবরস্থানে ও গোসলখানায় ছালাত আদায় করা যাবে না মর্মে অন্যত্র ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (তিরমিযী হা/৩১৭; মিশকাত হা/৭৩৭।)
 
মু
আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) হীতান-এ ছালাত আদায় করতে ভালবাসতেন। রাবীদের কেউ কেউ বলেছেন, হীতান অর্থ বাগান। (তিরমিযী হা/৩৩৪; মিশকাত হা/৭৫১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৯৫, ২/২৩৫।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে হাসান ইবনু আবী জাফর নামে দুর্বল রাবী আছে। ইমাম তিরমিযী বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে দুর্বল বলেছেন। (যঈফ তিরমিযী হা/৩৩৪; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪২৭০, ৯/২৬৮ পৃঃ।)


আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি তার বাড়ীতে ছালাত আদায় করার নেকী এক ছালাতের সমান, মহল্লার মসজিদে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা পঁচিশ ছালাতের সমান, জুমআ মসজিদের ছালাত পাঁচশ ছালাতের সমান, মসজিদে আক্বছায় এক ছালাত আদায় করা ৫০ হাযার ছালাতের সমান, আমার এই মসজিদে এক ছালাত ৫০ হাযার ছালাতের সমান, আর তার এক ছালাত মসজিদুল হারামে এক লক্ষ ছালাতের সমান। (ইবনু মাজাহ হা/১৩৭৫; মিশকাত হা/৭৫২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৯৬, ২/২৩৫ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব : যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে আবুল খাত্ত্বাব দিমাষ্কী ও যুরাইক্ব নামে দুই জন অপরিচিত রাবী আছে। যাদের দ্বারা দলীল গ্রহণ করা জায়েয নয়। (আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ৫৮০।) তবে এ প্রসঙ্গে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটি ছহীহ।
 
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
আমার মসজিদে ছালাত আদায় করা মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাযার ছালাতের চেয়েও উত্তম। আর মসজিদে হারামে ছালাত আদায় করার ছওয়াব অন্যান্য মসজিদের চেয়ে ১ লক্ষ গুণ বেশী।( ইবনু মাজাহ হা/১৪০৬, সনদ ছহীহ; ছহীহ বুখারী হা/১১৯০; মিশকাত হা/৬৯২।) অন্য হাদীছে এসেছে, মসজিদে কূবাতে এক ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলে একটি ওমরার ছওয়াব পাওয়া যায়। (ইবনু মাজাহ হা/১৪১১।)


(২) তিন মসজিদ ব্যতীত অধিক নেকীর আশায় অন্য কোন মসজিদে সফর করা:
অধিক ছওয়াবের আশায় অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন মসজিদে ভ্রমণ করে থাকে। মসজিদে বরকত বা মৃত ব্যক্তির ফয়েয পাওয়ার আশায় এমনটি করে থাকে। অথচ হাদীছে পরিষ্কারভাবে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন-
 
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
তিনটি মসজিদ ছাড়া ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। মসজিদুল হারাম, মসজিদে রাসূল (ছাঃ) এবং মসজিদুল আক্বছা। (ছহীহ বুখারী হা/১১৮৯; মিশকাত হা/৬৯৩।)
অতএব বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে বরকতের আশায় বেশী নেকী অর্জনের জন্য পৃথিবীর কোন মসজিদে সফর করতে যাওয়া যাবে না। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মসজিদে যাওয়ার প্রবণতা বেশী বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। অথচ রাসূল (ছাঃ) দেড় হাযার বছর পূর্বেই এই অভ্যাসের বিরুদ্ধে বলে গেছেন।


(৩) কবরস্থানে মসজিদ তৈরি করা এবং সেখানে ছালাত আদায় করা:
দেশে বহু মসজিদ করবস্থানকে লক্ষ্য করে গড়ে উঠেছে। হাযার কিংবা শত বছর পূর্বে কোন খ্যাতনামা আলেম বা পরহেযগার ব্যক্তিকে কবরস্থ করা হয়েছে। আর সেই কবরকে একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল পাকা করে তার উপরে সৌধ নির্মাণ করেছে এবং সেখানে মসজিদ তৈরি করেছে। এভাবে তারা বিনাপূজির বিশাল ব্যবসা করছে। এই সমস্ত স্থান প্রতিষ্ঠিত মসজিদে কোটি কোটি মানুষ ছালাত আদায় করছে। কখনো কবরকে সামনে করে কখনো ডানে কিংবা বামে করে। আবার কখনো পিছনে করে। অথচ এটা কবরস্থান। এধরণের স্থানে কস্মিনকালেও ছালাত হবে না।
 
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
পৃথিবীর পুরোটাই মসজিদ। তবে কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত। (তিরমিযী হা/৩১৭; ইবনু মাজাহ হা/৭৪৫; মিশকাত হা/৭৩৭, ছালাত অধ্যায়, মসজিদ সমূহ অনুচ্ছেদ।)


উপমহাদেশে বহু মৃত ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ মাযার তৈরি হয়েছে। আর সেগুলোতে একাধিক মসজিদও আছে। যা মৃত পীরকে বেষ্টন করে রেখেছে। তাকে লক্ষ্য করে বছরে উরসও করা হয়। এই আনন্দ অনুষ্ঠান করে তাকে মূর্তিতে পরিণত করা হয়েছে। আর এই তীর্থস্থানেই মানুষ কোটি কোটি টাকা, গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি নযর-নেওয়ায করছে। যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে মৃত পীরকে খুশি করা। উক্ত মূর্তির স্থানে ছালাত আদায় করা পরিষ্কার হারাম।

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ
তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরসমূহকে কবরে পরিণত করো না এবং আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করো না। তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর। তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছানো হয়। (আবুদাঊদ হা/২০৪২; নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২৬।)
অন্য হাদীছে এসেছে,
لَا تَتَّخِذُوْا قَبْرِيْ عِيْدًا তোমরা আমার কবরকে আনন্দ অনুষ্ঠানের স্থান হিসাবে গ্রহণ করো না।( মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪২; আলবানী, তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ১১৩।)
 
আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ইবাদত করা হবে। ঐ জাতির উপর আল্লাহ কঠোর আযাব প্রেরণ করুন যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে।( মালেক মুওয়াত্ত্বা হা/৫৯৩, সনদ ছহীহ।) অন্য বর্ণনায় এসেছে,
 
যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) হ
তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে মূর্তিতে পরিণত করবেন না, যেখানে ছালাত আদায় করা হবে। ঐ জাতির  উপর  আল্লাহ  কঠোর  আযাব  প্রেরণ  করুন যারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ হিসাবে গ্রহণ করেছে। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৪, সনদ ছহীহ।)


জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) কবর পাকা করতে, তার উপর বসতে এবং এর উপর সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। (ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৯; মিশকাত হা/১৬৭০।)

আবু মারছাদ গানাবী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কবরের দিকে ছালাত আদায় কর না এবং তার উপর বস না। (ছহীহ মুসলিম হা/২২৯৫; মিশকাত হা/১৬৯৮।)


বিশ্ব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যিনি, তিনি তাঁর কবরস্থানকে উরস বা আনন্দ অনুষ্ঠানে পরিণত করতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। নবী-রাসূলগণের কবরকে মসজিদে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন এবং যারা এধরনের জঘন্য কাজ করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দানের জন্য আল্লাহর নিকট বদ দোআ করেছেন। তাহলে সাধারণ লোকদের কবরকে কিভাবে মসজিদের স্থান হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে? তাদের কবরস্থানে বছরে কিভাবে অনুষ্ঠান করা যাবে?


এ সমস্ত কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মৃত ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মাযার-খানকা তৈরি হয়েছে? সেখানে মসজিদ তৈরি করে কেন কোটি কোটি মানুষের ঈমান হরণ করা হচ্ছে? কবরকে সিজদা করে, সেখানে মাথা ঠুকে আল্লাহর তাওহীদী চেতনা নস্যাৎ করা হচ্ছে? তাদের কর্ণকুহরে কেন এই সমস্ত বাণী প্রবেশ করে না? কারণ হল প্রতিনিয়ত তাদেরকে জিন শয়তান মূর্তিপূজার প্রতি উৎসাহিত করছে। উবাই ইবনু কাব (রাঃ) বলেন, مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে।( আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান; আল-আহাদীছুল মুখতারাহ হা/১১৫৭।) আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা কেবল নারীদের আহবান করে। বরং তারা বিদ্রোহী শয়তানকে আহবান করে (নিসা ১১৭)। নিম্নের হাদীছে আরো পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে-
 
আবু তোফাইল (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন মক্কা বিজয় করলেন তখন খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ)-কে একটি খেজুর গাছের নিকট পাঠালেন। সেখানে উযযা মূর্তি ছিল। খালিদ (রাঃ) সেখানে আসলেন। মূর্তিটি তিনটি বাবলা গাছের উপর ছিল। তিনি সেগুলো কেটে ফেললেন এবং তার উপরে তৈরি করা ঘর ভেঙ্গে দিলেন। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে এসে খবর দিলেন। তিনি বললেন, ফিরে যাও, তুমি কোন অপরাধ করোনি। অতঃপর খালিদ (রাঃ) ফিরে গেলেন। যখন খালিদ (রাঃ)-কে পাহাদাররা দেখল তখন তারা ঐ মূর্তিকে রক্ষা করার জন্য ঢাকতে লাগল এবং হে উযযা বলে ডাকতে লাগল। খালিদ (রাঃ) যখন মূর্তির কাছে এসে দেখেন বিস্তৃতচুল বিশিষ্ট নগ্ন মহিলা জিন, যার মাথা কাদায় ল্যাপ্টানো। তিনি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করলেন এবং হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে খবর দিলেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটাই সেই উযযা। (নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৯০২, সনদ ছহীহ।) তাছাড়া শয়তানের পরামর্শেই মূর্তিপূজার সূচনা হয়েছে। (সূরা নূহ ২৩; ছহীহ বুখারী হা/৪৯২০।)


শয়তান জিনের রূপ ধারণ করে প্রত্যেক মূর্তির মাঝে অবস্থান করে এবং মানুষকে এভাবেই পথভ্রষ্ট করে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে বলেছিলেন,  তুমি কোন মূর্তি না ভাঙ্গা পর্যন্ত ছাড়বে না এবং ছাড়বে না কোন উঁচু কবর যতক্ষণ না তা মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। (ছহীহ মুসলিম হা/২২৮৭; মিশকাত হা/১৬৯৬।) উক্ত নির্দেশের কারণে ছাহাবায়ে কেরামও কখনো শিরকের আস্তানাকে এক মুহূর্তের জন্যও বরদাশত করেননি। শিরকের শিখন্ডী উপড়ে ফেলেছেন।


নাফে (রাঃ) বলেন, ওমর (রাঃ) এ মর্মে জানতে পারলেন যে, যে গাছের নীচে রাসূল (ছাঃ) বায়আত নিয়েছিলেন ঐ গাছের কাছে মানুষ ভীড় করছে। তখন তিনি নির্দেশ দান করলে কেটে ফেলা হয়। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৭৫৪৫; তাহযীরুস সাজেদ, পৃঃ ৮৩।)

অতএব মসজিদের নামে যেভাবে মূর্তি ও কবরপূজা চলছে তা প্রাচীন যুগের শিরকের ঘাটির শামিল। মুসলিম উম্মাহকে সচেতনভাবে সেগুলো ত্যাগ করতে হবে। কাবা চত্তর থেকে রাসূল (ছাঃ) যেভাবে মূর্তি অপসারণ করেছিলেন সেভাবে তা অপসারণ করতে হবে। ছালাতের স্থানগুলোকে যাবতীয় শিরকমুক্ত করতে হবে।      
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন