রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১১

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত – ৫


জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত

 ছালাতের ফযীলত
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে ছালাতের ফযীলত সংক্রান্ত অনেক বর্ণনা রয়েছে। যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা ছালাতের প্রতি মনোযোগী হ
তে পারে এবং বিশুদ্ধতা ও একাগ্রতার সাথে একনিষ্ঠচিত্তে ছালাত সম্পাদন করতে পারে। এক কথায় ছালাতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমীয় বাণীই যথেষ্ট। কিন্তু বর্তমানে সেই অভ্রান্ত বাণী ছেড়ে যঈফ ও জাল হাদীছ এবং মিথ্যা, উদ্ভট, কাল্পনিক কাহিনীই শুনানো হচ্ছে। বই-পুস্তক লিখে ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। এগুলো মানুষের হৃদয়ে কোন প্রভাব ফেলে না। আমরা এই অধ্যায়ে সেগুলো উল্লেখ করার পাশাপাশি ছহীহ দলীলগুলোও উল্লেখ করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
 

(১) ছালাত জান্নাতের চাবি :
উক্ত মর্মে যে হাদীছ সমাজে চালু আছে তা যঈফ।

জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, জান্নাতের চাবি হল ছালাত। আর ছালাতের চাবি হল পবিত্রতা। (মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩; তিরমিযী হা/৪; মিশকাত হা/২৯৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৪, ২/৪৩; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৮৮।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটির প্রথম অংশ যঈফ। (যঈফুল জামে হা/৫২৬৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬০৯; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২১২।) আর দ্বিতীয় অংশ সম্পর্কে পৃথক সনদে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। (আবূদাঊদ হা/৬১; তিরমিযী হা/৩; মিশকাত হা/৩১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ১/৫১।)


প্রথম অংশ যঈফ হওয়ার কারণ হল- উক্ত সনদে দুজন দুর্বল রাবী আছে। (ক) সুলায়মান বিন করম ও (খ) আবূ ইয়াহইয়া আল-ক্বাত্তাত। (আলবানী, মিশকাত হা/২৯৪-এর টীকা দ্রঃ ১/৯৭ পৃঃ; শুআইব আরনাঊত্ব, তাহক্বীক্ব মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭০৩-এর আলোচনা দ্রঃ।)


জ্ঞাতব্য : জান্নাতের চাবি সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) একটি অনুচ্ছেদের বিষয়বস্তু আলোচনা করতে গিয়ে ওহাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ) থেকে যে বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তা হল- তাঁকে একদিন জিজ্ঞেস করা হল-লা ইলা-হা ইল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তখন তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে প্রত্যেক চাবির দাঁত রয়েছে। তুমি যদি এমন চাবি নিয়ে আস যার দাঁত রয়েছে তাহলে তোমার জন্য জান্নাত খোলা হবে। অন্যথা খোলা হবে না।(ছহীহ বুখারী ১/১৬৫ পৃঃ; হা/১২৩৭-এর পূর্বের আলোচনা দ্রঃ।) এছাড়াও আরো অন্যান্য হাদীছ দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়। (ছহীহ বুখারী হা/৫৮২৭, ২/৮৬৭ পৃঃ, পোষাক অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩; ছহীহ মুসলিম হা/২৮৩, ১/৬৬ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪২; মিশকাত হা/২৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৪, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৬, ১/৪৫ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১২; মিশকাত হা/৩৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫।) বুঝা যাচ্ছে যে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু জান্নাতের চাবি আর শরীআতের অন্যান্য আমল-আহকাম অর্থাৎ ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ঐ চাবির দাঁত।


(২) এক ওয়াক্ত ছালাত ছুটে গেলে এক হুকবা বা দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে।
নবী (ছাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ছালাত আদায় করে নেয় তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল ৮০ বছর। আর প্রত্যেক বছর ৩৬০ তিন। আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছর, যেভাবে গণনা করা হয়। উল্লেখ্য, উক্ত হিসাব অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়। (ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬।)


তাহক্বীক্ব : উক্ত বক্তব্যটি তাবলীগ জামাআতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে,-
এভাবেই মাজালিসুল আবরারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমার নিকটে হাদীছের যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে আমি উহা  পাইনি।(ফাযায়েলে আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬।) লেখক নিজেই যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু আর মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। দুঃখজনক হল এরপরও তা রাসূল (ছাঃ) নামে বর্ণনা করা হয়েছে, যা তাঁর নামে মিথ্যা অপবাদের শামিল।


জ্ঞাতব্য : ছহীহ হাদীছের  দৃষ্টিকোণ থেকেও কথাটি সঠিক নয়। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যে ব্যক্তির ছালাত ছুটে যাবে তার কাফফারা হল যখন স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নিবে।( ছহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ অধ্যায়, যে ব্যক্তি ছালাত ভুল করে অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, সমজিদ সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, ৬৮৪।)
এছাড়া রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের যুদ্ধের দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন। (ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ছালাতের সময় অধ্যায়, ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামাআতের সাথে ছালাত আদায় করেছেন অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৬২, মসজিদ সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭।)
তাছাড়া ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্য্যের তাপ বাড়ার পরে পড়েছেন। (ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১/২৩৮ পৃঃ, মসজিদ সমূহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬৮৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩, ২/২০৮ পৃঃ।) তাহলে তাঁদের শাস্তি কত বছর হবে? (নাঊযুবিল্লাহ)।

আব্দুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল
আছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) একদিন ছালাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, যে ব্যক্তি ছালাতের সংরক্ষণ করবে ক্বিয়ামতের দিন তা তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে তার হেফাযত করবে না তার জন্য তা জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে না। ক্বিয়ামতের দিন সে কারূন, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফের সাথী হবে। (আহমাদ হা/৬৫৭৬; মিশকাত হা/৫৭৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩১, ২/১৬৪ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩১২; তারাজুউল আলবানী হা/২৯।) উক্ত হাদীছের সনদে ঈসা ইবনু হেলাল ছাদাফী নামক একজন দুর্বল রাবী আছে। (মিশকাত হা/৫৭৮, ১/১৮৩ পৃঃ।)
উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছকে মিশকাতে ছহীহ বলা হলেও চূড়ান্ত তাহক্বীক্বে যঈফ প্রমাণিত হয়েছে। (তারাজুউল আলবানী হা/২৯।)

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ছালাত ছেড়ে দিল সে যেন প্রকাশ্য কুফুরী করল। (তাবারাণী, আল-মুজামুল আওসাত হা/৩৩৪৮।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮ ও ৫১৮০; যঈফুল জামে হা/৫৫২১; যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩০৪।)
ইমাম তাবারাণী হাদীছটি যঈফ হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আবূ জাফর রাযী থেকে হাশেম বিন কাসেম ছাড়া কেউ হাদীছটি বর্ণনা করেননি। মুহাম্মাদ ইবনু আবূদাঊদ তার থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছে। (আল-মুজামুল আওসাত হা/৩৩৪৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫০৮।)

ছালাত হল দ্বীনের খুঁটি। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত কায়েম করল সে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করল। আর যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিল দ্বীনকে ধ্বংস করল।( কাশফুল খাফা ২/৩২ পৃঃ; তাযকিরাতুল মাওযূআত, পৃঃ ৩৮; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।)


তাহক্বীক্ব : সমাজে হাদীছটির সমধিক প্রচার থাকলেও হাদীছটি গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এটি বাতিল ও মুনকার। (কাশফুল খাফা ২/৩১ পৃঃ।)


ছালাত পরিত্যাগকারীর হুকুম :
ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। কারণ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর শ্রেষ্ঠ ও প্রধান ইবাদত হ
ল ছালাত। ছালাত পরিত্যাগকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা ও রাসূল (ছাঃ) কঠোর হঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
সুতরাং তারা যদি তওবা করে, ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত আদায় করে তবেই তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই (তওবা ১১)। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন,
তাদের পর আসল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা ছালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই ধ্বংসে (জাহান্নামের গভীরে) পতিত হবে (মারইয়াম ৫৯)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, অপরাধীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের কিসে সাক্বার জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায়কারী ছিলাম না (মুদ্দাছি্ছর ৪১-৪৩)


উক্ত আলোচনা প্রমাণ করে ছালাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তি মুসলিম ভাই হতে পারে না; বরং ছালাত ত্যাগ করার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূল (ছাঃ) আরো স্পষ্ট করে বলেন,
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছা)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই কোন ব্যক্তি আর মুশরিক ও কাফেরের মাঝে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা।( ছহীহ মুসলিম হা/২৫৬ ও ২৫৭, ১/৬১ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭; মিশকাত হা/৫৬৯।)

আব্দুল্লাহ ইবনু বুরায়দা (রাঃ) তার পিতা হ
তে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমাদের ও তাদের (কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক) মধ্যে যে অঙ্গীকার রয়েছে তা হল ছালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিবে সে কুফুরী করবে।( তিরমিযী হা/২৬২১, ২/৯০ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়, ছালাত ত্যাগ করা অনুচ্ছেদ; নাসাঈ হা/৪৬৩; ইবনু মাজাহ হা/১০৭৯; মিশকাত হা/৫৭৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫২৭, ২/১৬২ পৃঃ, সনদ ছহীহ।)

আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব উকায়লী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণ আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল ছেড়ে দেওয়াকে কুফুরী বলতেন না, ছালাত ব্যতীত। (তিরমিযী হা/২৬২২, ২/৯০ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়, ছালাত পরিত্যাগ করা অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩২, ২/১৬৪ পৃঃ, সনদ ছহীহ।)


অতএব যে ব্যক্তি ছালাত আদায় করবে না সে নিঃসন্দেহে কুফুরী করবে। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ছালাত ছেড়ে দিলে বা অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে যে বের হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। (দেখুন: শায়খ আলবানী, হুকমু তারিকিছ ছালাহ, পৃঃ ৬।)


(৩) ছালাত মুমিনের জন্য মিরাজ বা নূর।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত মুমিনের মিরাজ।( তাফসীরে রাযী ১/২১৪ পৃঃ; তাফসীরে হাক্কী ৮/৪৫৩ পৃঃ; মিরক্বাতুল মাফাতীহ ১/১৩৪ পৃঃ, ঈমান অধ্যায়।)


তাহক্বীক্ব : উক্ত কথার পক্ষে কোন সনদ নেই। এটি ভিত্তিহীন ও বানাওয়াট।

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাত মুমিনের নূর।( মুসনাদের আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ২৯।)


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। মুহাদ্দিছ হুসাইন সালীম আসাদ বলেন, উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। (তাহক্বীক্ব মুসনাদে আবী ইয়ালা হা/৩৬৫৫।) উক্ত সনদে ঈসা ইবনু মায়সারা নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬৬০।) উল্লেখ্য, ছালাত নূর, ছাদাক্বা দলীল মর্মে ছহীহ মুসলিমে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা সঠিক। (ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮১।)

যে ব্যক্তি জামাআতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করে সে যেন আদম (আঃ)-এর সাথে ৫০ বার হজ্জ করে এবং যে ব্যক্তি যোহরের ছালাত জামাআতের সাথে পড়ে সে যেন নূহ (আঃ)-এর সাথে ৪০ কিংবা ৩০ বার হজ্জ করে। এভাবেই অন্যান্য ওয়াক্ত সে আদায় করে।( হাসান ইবনু মুহাম্মাদ আছ-ছাগানী, আল-মাওযূআত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।)


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। (আল-মাওযূআত হা/৪৮, পৃঃ ৪২।)

সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের ছালাতের দিকে গেল, সে ঈমানের পতাকা নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (ছালাত আদায় না করে) বাজারের দিকে গেল, সে  শয়তানের পতাকা নিয়ে গেল। (ইবনু মাজাহ হা/২২৩৪, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার সমূহ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৬৪০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৮৯, ২/১৮৯ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: উক্ত হাদীছের সনদ অত্যন্ত দুর্বল। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/২২৩৪।) এর সনদে উবাইস ইবনু মাইমুন নামক রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে মুনকার রাবী বলে অভিযোগ করেছেন। ইবনু হিববান বলেন, সে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির নাম দিয়ে ধারণা পূর্বক বহু জাল হাদীছ বর্ণনা করেছে। (মিশকাত হা/৬৪০-এর টীকা দ্রঃ।)


ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে একদা জিজ্ঞেস করা হল আল্লাহর এই বাণী সম্পর্কে- নিশ্চয়ই ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। তখন তিনি বললেন, যাকে তার ছালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না, তার ছালাত হয় না। (তাফসীরে ইবনে কাছীর; সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫; ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭২।)


তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে ইবনু জুনাইদ নামে একজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। মুহাদ্দিছগণ বর্ণনাটিকে মুনকার বলেছেন। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৮৫।)


ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যার ছালাত তাকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে না তাকে উহা ইসলাম থেকে দূরে সরে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না না। (ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৭৩; তাবারাণী, আল-মুজামুল কাবীর হা/১০৮৬২।)


তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি বাতিল বা মিথ্যা। এর সনদে লাইছ ইবনু আবী সালীম নামক ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/২, ১/৫৪ পৃঃ।)


জ্ঞাতব্য : উক্ত বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে ত্রুটিপূর্ণ কোন ব্যক্তি ছালাত আদায় করলে ছালাত কবুল হয় না। সুতরাং ছালাত আদায় করে কোন লাভ নেই। কিন্তু উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং ছালাত আদায়ের মাধ্যমে এক সময় সে আল্লাহর অনুগ্রহে পাপ কাজ ছেড়ে দিবে। ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে,
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বললেন, অমুক ব্যক্তি রাত্রিতে ছালাত আদায় করে আর সকাল হ
লে চুরি করে। তিনি উত্তরে বললেন, ছালাত তাকে অচিরেই তা থেকে বিরত রাখবে। (আহমাদ হা/৯৭৭৭; মিশকাত হা/১২৩৭, সনদ ছহীহ।)

[চলবে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন