শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১১

জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত – ৪


জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত

(২৩) মোজার উপরে ও নীচে মাসাহ করা:
অনেককে মোজার উপরে নীচে উভয় দিকে মাসাহ করতে দেখা যায়। অথচ সুন্নাত হ
ল মোজার উপরে মাসাহ করা। (ছহীহ বুখারী হা/১৮২; মুসলিম হা/৬৪৯; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৬১ ও ১৬২, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/৯৮, ১/২৮-২৯ পৃঃ।)

উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন-
عَنِ الْمُغِيْرَةَ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ وَضَّأْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ فَمَسَحَ أَعْلَى الْخُفَّيْنِ وَأَسْفَلَهُمَا-
মুগীরা ইবনু শু
বা (রাঃ) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-কে ওযূ করিয়েছি। তিনি দুই মোজার উপরে এবং নীচে  মাসাহ করেছেন। (আবূদাঊদ হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৫০, পৃঃ ৪২; মিশকাত হা/৫২১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৬, ২/১৩১ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীছটি ত্রুটিপূর্ণ। আমি ইমাম আবু যুরআহ ও ইমাম বুখারীকে এই হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয়। ইমাম আবূদাঊদও  একে দুর্বল বলেছেন। (هذا حديث معلول وسألت أبا زرعة ومحمدا يعني البخاري عن هذا الحديث فقالا ليس بصحيح وكذا ضعفه أبوداود- -যঈফ তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ)।) এই হাদীছের সনদে ছাওর নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, সে রাজা ইবনু হাইওয়া থেকে না শুনেই বর্ণনা করেছে। (যঈফ আবূদাঊদ হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ।)


জ্ঞাতব্য : বর্তমানে অনেকেই মোজা পরিহিত অবস্থায় টাখনুর নীচে লুঙ্গি-প্যান্ট পরিধান করাকে জায়েয বলছেন ও পরিধান করছেন। এটা শরীআতকে ছোট করার মিথ্যা কৌশল মাত্র। পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির সাথে আপোস করে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে নস্যাৎ করতে চায়।


(২৪) ওযূর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দোআ পড়া:
ওযূর দো
আ পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
عَنْ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ رَفَعَ نَظْرَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ مِنْ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ-
উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করল অতঃপর আকাশের দিকে চোখ তুলে দো
আ পড়ল তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যেকোন দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে। (আহমাদ হা/১২১; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৩।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি মুনকার। আকাশের দিকে তাকানো অংশটুকু ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তাই শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এই অতিরিক্ত অংশটুকু অস্বীকৃত। কারণ ইবনু আম আবী উক্বাইল এককভাবে বর্ণনা করেছে। সে অপরিচিত।( وهذه الزياوة منكرة لأنه تفرد بها ابن عم أبي عقيل هذا وهو مجهول. -আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬ এর আলোচনা, ১/১৩৫ পৃঃ।)


(২৫) ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়া:
উক্ত আমল সম্পর্কে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অথচ আশরাফ আলী থানবী তার বইয়ে সূরা ক্বদর পড়ার কথা বলেছেন এবং ওযূর পরের দো
আর সাথে অনেকগুলো নতুন শব্দ যোগ করেছেন যা হাদীছের গ্রন্থ সমূহে পাওয়া যায় না। (পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ৪৫।)


অতএব ওযূর করার পর শুধু নিম্নের দোআ পাঠ করবে-
أَشْهَدُ أنْ لاَّ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. اَللّهُمَّ اجْعَلْنِى مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِى مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ- (ছহীহ মুসলিম হা/৪৭৬, ১/১২২ পৃঃ; মিশকাত ৩৯ পৃঃ, হা/২৮৯ পবিত্রতা অধ্যায়; ছহীহ তিরমিযী হা/৫৫, ১/১৮ পৃঃ সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮৯; ইরওয়া হা/৯৬, সনদ ছহীহ।)


(২৬) রক্ত বের হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়:
শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হ
লে ওযূ করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ قَالَ قَالَ تَمِيْمُ الدَّارِيُّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوضُوْءُ مِنْ كُلِّ دَمٍ سَائِلٍ-  
ওমর ইবনে আব্দুল আযীয তামীম দারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক প্রবাহমান রক্তের কারণেই ওযূ করতে হবে। (দারাকুৎনী ১/১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০; মিশকাত হা/৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩০৭, ২/৫৭।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০।) ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয তামীম দারীর নিকট থেকে শুনেননি। আর ইয়াযীদ ইবনু খালেদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ দুইজনই অপরিচিত। (দারাকুৎনী ১/১৫৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৩৩ - عمر بن عبد العزيز لم يسمع من تميم الداري ولا رآه ويزيد بن خالد ويزيد بن محمد مجهولان)


তাছাড়া রক্ত বের হলে ছাহাবায়ে কেরাম ওযূ করতেন না মর্মে ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
عَنْ بَكْرٍ قَالَ رَأَيْتُ بْنَ عُمَرَ عَصَرَ بَثْرَةً فِيْ وَجْهِهِ فَخَرَجَ شَيْءٌ مِنْ دَمٍ فَحَكَّهُ بَيْنَ أَصْبَعَيْهِ ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأ-
বাকর (রহঃ) হ
তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তার মুখমন্ডলে উঠা ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু রক্ত বের হল। তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর ছালাত আদায় করেন কিন্তু ওযূ করেননি। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৬৮৩ পৃঃ- ولهذا كان مذهب أهل الحجاز أن ليس في الدم وضوء ، وهو مذهب الفقهاء السبعة من أهل المدينة وسلفهم في ذلك بعض الصحابة।)


শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হলে ওযূ করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তা কম হোক বা বেশী হোক। (وَلاَ يَصِحُّ حَدِيْثٌ فِىْ وُجُوْبِ الْوَضُوْءِ مِنَ الدَّمِ كَانَ قَلِيْلاً أَوْ كَثِيْرًا -আলবানী, মিশকাত হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ।)

(২৭) বমি হলে ওযূ ভেঙ্গে যায়:
ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে বমিকে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। আর মানুষও তাই আমল করে থাকে। অথচ তার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصَابَهُ قَيْءٌ أَوْ رُعَافٌ أَوْ قَلَسٌ أَوْ مَذْيٌ فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ ثُمَّ لِيَبْنِ عَلَى صَلاَتِهِ وَهُوَ فِي ذَلِكَ لاَ يَتَكَلَّمُ-
আয়েশা (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের মধ্যে কারো যদি বমি হয় অথবা নাক থেকে রক্ত ঝরে বা মুখ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বের হয় কিংবা মযী নির্গত হয় তাহলে সে যেন ফিরে যায় এবং ওযূ করে। এরপর পূর্ববর্তী ছালাতের উপর ভিত্তি করে ছালাত আদায় করে। আর এই সময়ে সে কোন কথা বলবে না। (ইবনু মাজাহ হা/১২২১, ছালাত কায়েম ও তার সুন্নাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৭।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে, সে যঈফ। সে হিজাযের দুই ব্যক্তি বর্ণনা করেছে কিন্তু তাও যঈফ। (في إسناده إسماعيل بن عياش . وقد روى عن الحجازيين وروايته عنهم ضعيفة  -যঈফ ইবনে মাজাহ হা/১২২১; যঈফ আবূদাঊদ (আল-উম্ম), পৃঃ ৬৮; যঈফুল জামে হা/৫৪২৬।)
 
عن زيد بن علي عن أبيه عن جده قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَلْسُ حَدَثٌ.
যায়েদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বমি অপবিত্র। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি নিতান্ত যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে সাওর নামক রাবী রয়েছে সে যায়েদ বা অন্য কারো নিকট থেকে বর্ণনা করেনি। (দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০৭৫, ৯/৭২ পৃঃ; যঈফুল জামে হা/৪১৩৯।)


অতএব বমি হলে ওযূ করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ বিধান নেই।


জ্ঞাতব্য : হেদায়া ও কুদূরীতে রক্ত বের হওয়া ও বমি হওয়াকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। (والدم والقيح إذا خرجا من البدن فتجاوزا إلى موضع يلحقه حكم التطهير والقئ ملء الفم. -হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩; বঙ্গানুবাদ ১/৮-৯ পৃঃ; কুদূরী, পৃঃ ৫।) আর সে কারণেই এই আমল চালু আছে। দুঃখজনক হল, ইমাম দারাকুৎনীর উক্ত মন্তব্য থাকতে হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে তা পেশ করা হল?


(২৮) ওযূ থাকা সত্ত্বেও ওযূ করলে দশগুণ নেকী:
উক্ত ফযীলত সঠিক নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ فَلَمَّا نُودِىَ بِالظُّهْرِ تَوَضَّأَ فَصَلَّى فَلَمَّا نُودِىَ بِالْعَصْرِ تَوَضَّأَ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ تَوَضَّأَ عَلَى طُهْرٍ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ-
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ওযূ অবস্থায় ওযূ করবে তার জন্য দশটি নেকী রয়েছে। (আবূদাঊদ হা/৬২, ১/৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫১২, পৃঃ ৩৯; তিরমিযী হা/৫৯, ১/১৯ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৩, ২/৪৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী, মুনযেরী, ইরাক্বী, নববী, ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ হাদীছটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত। (যঈফ আবূদাঊদ হা/১০।) উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ ইফরীক্বী ও গুত্বাইফ নামক দুই দুর্বল ও অপরিচিত রাবী আছে। (আবূদাঊদ হা/৬২; ইবনু মাজাহ হা/৫১২; তিরমিযী হা/৫৯; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩, ১/৯৬ পৃঃ।)
 
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ وَاحِدَةً فَتِلْكَ وَظِيفَةُ الْوُضُوءِ الَّتِي لاَ بُدَّ مِنْهَا وَمَنْ تَوَضَّأَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُ كِفْلَانِ وَمَنْ تَوَضَّأَ ثَلاَثًا فَذَلِكَ وُضُوئِي وَوُضُوءُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِى-
ইবনু ওমর (রাঃ) হ
তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি একবার করে ওযূ করবে সে ব্যক্তি ওযূর নিয়ম পালন করল, যা তার জন্য আবশ্যক ছিল। যে ব্যক্তি দুইবার করে ধৌত করবে সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার করে ধৌত করবে তার ওযূ আমার ও আমার পূর্বের নবীগণের ওযূর ন্যায় হল। (মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭৩৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৪।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। (যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৬; তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/৫৭৩৫।) উক্ত যঈফ হাদীছ হেদায়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে। (ঐ, ১/১৯ পৃঃ)। এর সনদে যায়েদ আল-আম্মী নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৪২০।)
 
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  يَقُوْلُ لاَ يُسْبِغُ عَبْدٌ الْوُضُوءَ إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ-
ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযূ করে তখন আল্লাহ তার সামনের ও পিছনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদুল বাযযার হা/৪২২, ১/৯৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯২।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি মুনকার বা অস্বীকৃত। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০৩৬, ১১/৬২ পৃঃ।)

(২৯) তায়াম্মুমের সময় দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা:
তায়াম্মুম করার সময় একবার মাটিতে হাত মারতে হবে এবং কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنّهُ قَالَ  فِى التَّيَمُّمِ ضَرْبَتَانِ ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ وَضَرْبَةٌ لِلْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তায়াম্মুমে দুইবার হাত মারতে হবে। মুখের জন্য একবার আর কনুই পর্যন্ত দুই হাত মাসাহর জন্য একবার। (বায়হাক্বী হা/১০৫৪, ১/২০৭; হাকেম হা/৬৩৪ ও ৬৩৬; আবূদাঊদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; দারাকুৎনী ১/১৭৭; বলূগুল মারাম হা/১২৮; বিস্তারিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ ১৯৪-১৯৭।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে কয়েকজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর আল-উমরা নামক রাবীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হিসাবে যঈফ। আলী ইবনু যাবইয়ান নামক রাবী অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথ্যুক, অপবিত্র। ইমাম বুখারী বলেন, সে মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী এবং ইমাম নাসাঈ বলেন, সে হাদীছের পরিত্যক্ত রাবী। (وهذا إسناد ضعيف جداً عبد الله بن عمر هو العمري المكبر ضعيف سيىء الحفظ ووقع في المستدرك عبيد الله بن عمرمصغراً ولعله خطأ مطبعي .وعلي بن ظبيان ضعيف جداً . قال ابن معين كذاب خبيث وقال البخاري منكر الحديث وقال النسائي متروك الحديث. -সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪২৭; যঈফুল জামে হা/২৫১৯; যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।)


প্রশ্ন হল, উক্ত হাদীছ হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে স্থান পেল? (হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ৫০, তায়াম্মুম অনুচ্ছেদ; কুদূরী পৃঃ ১২।) অথচ ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সম্পর্কে। (ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।) সেই হাদীছ প্রত্যাখ্যান করার কারণ অজানা।

عن نَافِعٌ قَالَ انْطَلَقْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِي حَاجَةٍ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَضَى ابْنُ عُمَرَ حَاجَتَهُ فَكَانَ مِنْ حَدِيثِهِ يَوْمَئِذٍ أَنْ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سِكَّةٍ مِنْ السِّكَكِ وَقَدْ خَرَجَ مِنْ غَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى إِذَا كَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَتَوَارَى فِي السِّكَّةِ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ عَلَى الْحَائِطِ وَمَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ ثُمَّ ضَرَبَ ضَرْبَةً أُخْرَى فَمَسَحَ ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ رَدَّ عَلَى الرَّجُلِ السَّلَامَ وَقَالَ إِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرُدَّ عَلَيْكَ السَّلَامَ إِلَّا أَنِّي لَمْ أَكُنْ عَلَى طُهْرٍ-
নাফে
বলেন, আমি একদা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-এর সাথে তাঁর এক কাজে গিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তার কাজ সমাধা করলেন। সেই দিন তার কথার মধ্যে এই কথা ছিল যে, কোন এক ব্যক্তি এক গলিতে চলছিল এমন সময় রাসূল (ছা)-এর সাক্ষাৎ পেল। তিনি তখন পায়খানা বা পেসাবখানা থেকে বের হয়েছেন। সে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর নিলেন না। এমনকি যখন গলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি দুই হাত দেওয়ালের উপর মারলেন এবং উহা দ্বারা মুখমন্ডল মাসাহ করলেন। অতঃপর পুনরায় হাত মারলেন এবং দুই হাত মাসাহ করলেন। তারপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন আর বললেন, আমি ওযূ অবস্থায় ছিলাম না। উহাই তোমার সালামের উত্তর দিতে আমাকে বাধা দিয়েছিল। (আবূদাঊদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৭, ২/১০৯ পৃঃ, অপবিত্র ব্যক্তির সাথে মিলামেশা অনুচ্ছেদ।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ বিন ছাবিত তায়াম্মুম সম্পর্কে একটি মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছে।( قَالَ أَبُو دَاوُد سَمِعْت أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يَقُولُ رَوَى مُحَمَّدُ بْنُ ثَابِتٍ حَدِيثًا مُنْكَرًا فِي التَّيَمُّمِ  -যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।) ইমাম বুখারী এবং ইয়াহইয়া ইবনু মাঈনও অনুরূপ বলেছেন। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীটি ছহীহ নয়। কারণ মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত আল-আবদী অত্যন্ত দুর্বল। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না (لا يصح؛ لأن محمد بن ثابت العبدي ضعيف جداً، لا يحتج بحديثه  যঈফ আবূদাঊদ (আল-উম্ম) হা/৫৮, পৃঃ ১৩৬।)

ইমাম আবূদাঊদ আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুইবার হাত মারা ও ইবনু ওমরের কাজের যে বর্ণনা করেছে এই ঘটনার ব্যাপারে সে নির্ভরযোগ্য নয়। (لَمْ يُتَابَعْ مُحَمَّدُ بْنُ ثَابِتٍ فِي هَذِهِ الْقِصَّةِ عَلَى ضَرْبَتَيْنِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَوَوْهُ فِعْلَ ابْنِ عُمَرَ -যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।)

তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি:
পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে
বিসমিল্লাহ বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে। (মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১; ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২ সনদ হাসান; মিশকাত হা/৪০২।) অতঃপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখমন্ডল তারপর দুই হাত একবার কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ هَكَذَا فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ-
তোমার জন্য এইরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুঁক দিলেন। অতঃপর দুই হাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন। (ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।)


উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদে দুইবার হাত মারা ও পুরো হাত বগল পর্যন্ত মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ বিশুদ্ধ হলেও সেগুলো মূলতঃ কতিপয় ছাহাবীর ঘটনা মাত্র। যা রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার আগের বিষয়। (আবূদাঊদ হা/৩১৮, ১/৪৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৩৬।) অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুমের উক্ত পদ্ধতি শিক্ষা দান করেন। যেমন- ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বলেন,
هذا حكاية فعلهم لم ننقله عن رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كما حكى عمار عن نفسه التمعك فى حال الجنابة فلما سأل النبى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وأمره بالوجه والكفين انتهى إليه وأعرض عن فعله.
এটা ছাহাবীদের কাজের ঘটনা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) থেকে নকল করতে পারিনি। যেমনটি আম্মার (রাঃ) জুনুবী অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করার ঘটনা নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর যখন তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি শুধু মুখমন্ডল ও দুই কব্জি মাসহের নির্দেশ দান করেন। এ পর্যন্তই শেষ করেছেন। আর আম্মার (রাঃ) তার কাজ থেকে ফিরে আসেন। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৩৬-এর টীকা দ্রঃ ১/১৬৭ পৃঃ।)


শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
لكن العمل ليس عليه لأن الصحابة لم يفعلوا ذلك بتعليم من النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وإنما العمل على حديثه الآخر الآتي بعده-
কিন্তু আমল এর উপর (দুই হাত মারা) ছিল না। কারণ তখন ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা অনুযায়ী করেননি। বরং আমল ছিল শেষ হাদীছের প্রতি, যা পরেই আসছে। (ছহীহ আবূদাঊদ হা/৩৪৩, ২/১২৬ পৃঃ।) অতএব রাসূলের আমল ও বক্তব্যই উম্মতের জন্য অনুসরণীয়।


(৩০) মুছল্লীর ওযূতে ত্রুটি থাকলে ইমামের ক্বিরাআতে ভুল হয়:
আলেমদের মাঝে উক্ত বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।
عَنْ شَبِيبٍ أَبِي رَوْحٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَقَرَأَ الرُّومَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّوْنَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُوْنَ الطُّهُوْرَ فَإِنَّمَا يَلْبِسُ عَلَيْنَا الْقُرْآنَ أُولَئِكَ-
শাবীব আবী রাওহ ছাহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত আদায় করলেন এবং সূরা রূম পড়লেন। কিন্তু পড়ার মাঝে কিছু গোলমাল হ
ল। ছালাত শেষে তিনি বললেন, তাদের কী হয়েছে যে, যারা আমাদের সাথে ছালাত আদায় করে অথচ উত্তমরূপে ওযূ করে না। এরাই আমাদের কুরআন তেলাওয়াতে গোলযোগ ঘটায়। (নাসাঈ হা/৯৪৭, ১/১১০ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৫, ২/৪৪।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল মালেক বিন উমাইর নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে। (তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২৯৫-এর টীকা দ্রঃ; নাসাঈ হা/৯৪৭; যঈফুল জামে হা/৫০৩৪।)

(২৮) মাথার চুলের গোড়ায় নাপাকি থাকবে মনে করে সর্বদা মাথার চুল ছোট করে রাখা বা কামিয়ে রাখা:
নাপাকি থাকার ভয়ে এক শ্রেণীর মুরববী সর্বদা মাথা ন্যাড়া করে রাখেন বা চুল খুব ছোট করে রাখেন এবং একে খুব ফযীলতপূর্ণ মনে করেন। আলী (রাঃ) এরূপ করতেন বলে তারা এর অনুসরণ করে থাকেন। অথচ উক্ত মর্মে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা যঈফ, মোটেই আমলযোগ্য নয়।

 
عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَرَكَ مَوْضِعَ شَعْرَةٍ مِنْ جَنَابَةٍ لَمْ يَغْسِلْهَا فُعِلَ بِهِ كَذَا وَكَذَا مِنَ النَّارِ قَالَ عَلِىٌّ فَمِنْ ثَمَّ عَادَيْتُ رَأْسِىْ فَمِنْ ثَمَّ عَادَيْتُ رَأْسِىْ ثَلاَثًا وَكَانَ يَجِزُّ شَعْرَهُ-
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নাপাকীর এক চুল পরিমাণ স্থানও ছেড়ে দিবে এবং উহা
  ধৌত করবে না তার সাথে আগুনের দ্বারা এই এই ব্যবস্থা করা হবে। আলী (রাঃ) বলেন, সেই অবধিই আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করেছি। একথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি তার মাথার চুল খুব ছোট করে রাখতেন। (আবূদাঊদ হা/২৪৯, ১/৩৩ পৃঃ; আহমাদ হা/১১২১; মিশকাত হা/৪৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৮।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৩; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৪, ১/১৩৮ পৃঃ।) উক্ত বর্ণনার সনদে আত্বা, হাম্মাদ ও যাযান নামের ব্যক্তি ত্রুটিপূর্ণ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০, ২/২৩২ পৃঃ।)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ تَحْتَ كُلِّ شَعْرَةٍ جَنَابَةً فَاغْسِلُوا الشَّعْرَ وَأَنْقُوا الْبَشَرَ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক চুলের নীচেই অপবিত্র রয়েছে। সুতরাং চুলগুলোকে ভালভাবে ধৌত করবে এবং চামড়াকে সুন্দর করে পরিষ্কার করবে। (আবূদাঊদ হা/২৪৮, ১/৩৩ পৃঃ; তিরমিযী হা/১০৬, ১/২৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৯৭, পৃঃ ৪৪; আলবানী, মিশকাত হা/৪৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৭, ২/৯৭ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১।) এর সনদে হারিছ ইবনু ওয়াজীহ নামক এক রাবী আছে। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, তার হাদীছ মুনকার আর সে দুর্বল রাবী। (الحارث بن وجيه حديثه منكر وهو ضعيف - যঈফ আবূদাঊদ হা/২৮৪; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৩, ১/১৩৮ পৃঃ।)
 
عَنْ أَبِى أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَأَدَاءُ الْأَمَانَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهَا قُلْتُ وَمَا أَدَاءُ الْأَمَانَةِ قَالَ غُسْلُ الْجَنَابَةِ فَإِنَّ تَحْتَ كُلِّ شَعَرَةٍ جَنَابَةً-
আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম
আ থেকে অপর জুমআ, আমানত আদায় করা- এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আমি বললাম, আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, জানাবাতের গোসল করা। কারণ প্রতিটি পশমের গোড়ায় অপবিত্রতা রয়েছে। (ইবনু মাজাহ হা/৫৯৮, পৃঃ ৪৪, পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৬।)


তাহক্বীক্ব : উক্ত হাদীছও যঈফ। (যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৯৮।) এর সনদে উতবা ইবনু আবী হাকীম নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১, ৮/২৭২।)


(২৯) ঋতুবতী মহিলা বা অপবিত্র ব্যক্তিদেরকে মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা:
অপবিত্র ব্যক্তি বা ঋতুবতী মহি
লা কুরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ তেলাওয়াত করতে পারে। (ছহীহ বুখারী হা/৩০৫ ও ৩০৬, ঋতু অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭।) মুখস্থও পড়া যাবে না বলে যে কথা প্রচলিত আছে তা সঠিক নয়। অনুরূপ অপবিত্র ব্যক্তি সালাম-মুছাফাহা করতে পারে না, কোন বিশেষ পাত্র স্পর্শ করতে পারে না ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বলে যে কথা সমাজে প্রচলিত আছে তা কুসংস্কার মাত্র। আর এ ব্যাপারে যে সমস্ত কথা বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ ও ভিত্তিহীন। যেমন-
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِنْ الْقُرْآنِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রী লোক এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়বে না। (তিরমিযী হা/১৩১; মিশকাত হা/৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩২, ২/১০৮।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি মুনকার। ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি ইসমাঈল বিন আইয়াশ হিজায ও ইরাকের অধিবাসীদের থেকে বর্ণনা করেছে। তার হাদীছগুলো মুনকার। সে যঈফ হাদীছ বর্ণনা করেছে। (سَمِعْت مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَعِيلَ يَقُولُ إِنَّ إِسْمَعِيلَ بْنَ عَيَّاشٍ يَرْوِي عَنْ أَهْلِ الْحِجَازِ وَأَهْلِ الْعِرَاقِ أَحَادِيثَ مَنَاكِيرَ كَأَنَّهُ ضَعَّفَ -যঈফ তিরমিযী হা/১৩১।)
 
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا-
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অপবিত্র না থাকলে প্রত্যেক অবস্থাতেই তিনি আমাদের কুরআন পড়াতেন। (আহমাদ, আবূদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু হিববান, বলূগুল মারাম হা/১০০।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। (যঈফ তিরমিযী হা/১৪৬।)
 
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ النَّبِىُِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  يَخْرُجُ مِنَ الْخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ أَوْ قَالَ يَحْجِزُهُ عَنْ الْقُرْآنِ شَيْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ-
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) পায়খানা হ
তে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। অপবিত্রতা ছাড়া কুরআন হতে তাকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না। (আবূদাঊদ হা/২২৯; নাসাঈ হা/২৬৫; মিশকাত হা/৪৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩১, ২/১০৭।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। (ইরওয়াউল গালীল হা/৪৮৫।)

পবিত্রতা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ কয়েকটি যঈফ ও জাল হাদীছ:
নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা পেশ করা হ
ল যেগুলো মানুষের মুখে মুখে খুবই প্রচলিত। অথচ তা যঈফ ও জাল বর্ণনা। এ সমস্ত বর্ণনা প্রচার করা উচিত নয়।
 
عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ-
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) যখন তিনি টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন। (আবূদাঊদ হা/১৯; তিরমিযী হা/১৭৪৬; নাসাঈ হা/৫২১৩; মিশকাত হা/৩৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩১৬, ২/৬২।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, এই হাদীছ মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য।( যঈফ আবূদাঊদ হা/১৯ هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ- ।)
 
عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ-
ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে তখন সে যেন পুরুষাঙ্গ তিনবার ঝেড়ে নেয়। (ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; বলূগুল মারাম হা/৯০।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে যামআহ ইবনু ছালেহ আল-জুনদী ও ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ নামক দুইজন দুর্বল রাবী আছে। (তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/১৯০৭৬; যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬২১।)
 
عَنْ أَّبِي رَافِعٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهَِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ وُضُوْءَ اِلصَّلاةِ حَرَّكَ خَاتَمَهُ فِي إِصْبَعَهِ-
আবু রাফে
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন। (দারাকুৎনী ১/৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; মিশকাত হা/৪২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৯৫।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মামার ও তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে দুইজন দুর্বল রাবী আছে। (যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; যঈফুল জামে হা/৪৩৬১।)
 
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجِّهُوا هَذِهِ الْبُيُوتَ عَنِ الْمَسْجِدِ فَإِنِّي لَا أُحِلُّ الْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلَا جُنُبٍ-
আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই সকল ঘরের দরজা মসজিদের দিক হ
তে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না। (আবূদাঊদ হা/২৩২; মিশকাত হা/৪৬২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৩, ২/১০৮ পৃঃ।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে জাসরা বিনতে দিজাজা নামক একজন বর্ণনাকারী আছে সে অত্যধিক ত্রুটিপূর্ণ। (إسناده ضعيف من أجل جسرة بنت دجاجة قال البخاري عندها عجائب وقد ضعف الحديث جماعة كما قال الخطابي ومن هؤلاء: البيهقي وابن حزم، فقال هذا باطل وأبو محمد عبد الحق فقال لا يثبت. -যঈফ আবূদাঊদ হা/২৩২; ইরওয়াউল গালীল হা/১২৪, ১৯৩, ৯৬৮।)
 
عَنْ عَلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمََ لاَ تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ صُوْرَةٌ وَلَا كَلْبٌ وَلَا جُنُبٌ-
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না সেই ঘরে, যাতে কোন ছবি রয়েছে অথবা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি রয়েছে। (আবুদাউদ হা/২২৭, ৪১৫২; নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৪, ২/১০৮।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। (যঈফ আবুদাউদ হা/২২৭, ৪১৫২; যঈফ নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩।)
 
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي اغْتَسَلْتُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَصَلَّيْتُ الْفَجْرَ ثُمَّ أَصْبَحْتُ فَرَأَيْتُ قَدْرَ مَوْضِعِ الظُّفْرِ لَمْ يُصِبْهُ الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كُنْتَ مَسَحْتَ عَلَيْهِ بِيَدِكَ أَجْزَأَكَ-
আলী (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি নাপাকীর গোসল করেছি ও ফজরের ছালাত পড়েছি। অতঃপর দেখি এক নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌঁছেনি, রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি তখন তুমি উহার উপর তোমার (ভিজা) হাত মুছে দিতে, তোমার পক্ষে যথেষ্ট হ
ত। (ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪, পৃঃ ৪৮; মিশকাত হা/৪৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪১৩, ২/৯৮।)


তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে। (যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৯-এর টীকা দ্রঃ।)
[চলবে]

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন