রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১১

সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর


সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কিনবেন কোন প্রকাশনীর


আমাদের দেশে ইসলামী ইলম চর্চার ইতিহাস অনেক পুরোনো । কুরআন ও হাদীসের বঙ্গানুবাদও হয়েছে প্রায় দুশো বছর । আমাদের দেশে অনেক গুলো প্রকাশনী সিয়াহ সিত্তাহ সহ আরো অনেক হাদীস সংকলন গ্রন্থ প্রকাশ করেছে । কিন্তু সব প্রকাশনীর প্রকাশনার মান এক রকম নয় । তাই আপনারা সব থেকে সেরা হাদীস গ্রন্থ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ কোন প্রকাশনী থেকে কিনবেন তার একটা পরামর্শ আপনাদের দিতে চাই ।
আমি সহীহুল বুখারীর খন্ড গুলি মোট তিনটি প্রকাশনী থেকে সংগ্রহ করেছি । এগুলো হচ্ছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , আধুনিক প্রকাশনী ও তাওহীদ পাবলিকেশন্স ।এ তিনটির প্রকাশনার ভেতরে আমার তুলনামূলক তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনা বেশি ভাল লেগেছে । তাই আমি আপনাদের ওই প্রকাশনীর সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করবো । তাওহীদ পাবলিকেশন্স এর প্রকাশনার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি এর ভূমিকা থেকে কিছু অংশ আমি এখানে তুলে ধরছিঃ
আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় হাদীস অনুবাদের কাজ যদিও বহু পূর্বেই শুরু হয়েছে তবুও বাংলা ভাষায় হাদীস চর্চায় আমরা পিছিয়ে । ফলে এখনও আমরা সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে হাদীসের ব্যাপারে অশিক্ষিত অনভিজ্ঞ নামধারী কতিপয় আলিমদের মনগড়া ফাতাওয়ার উপর আমল করতে গিয়ে আমাদের আমলের ক্ষতি সাধন করছি । আর সাথে সাথে সহীহ হাদীস থেকে দূরে সরে গিয়ে আমরা তাকলীদের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি ।
আমাদের দেশে যারা এ সকল সহীহ হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশ করছেন তাদের অনেকেই আবার হাদীসের অনুবাদে সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনুবাদে গড়মিল ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন ।নমুনা স্বরুপ মূল বুখারীতে ইমাম বুখারী কিতাবুস সাওমের পরে কিতাবুত তারাবীহ নামক একটি পর্ব রচনা করেছেন । অথচ ভারতীয় মূদ্রণের মধ্যে দেওবন্দি আলিমদের চাপে (?) কিতাবুত তারাবীহ কথাটি মুছে দিয়ে সেখানে কিয়ামুল লাইল বসানো হয়েছে । অবশ্য প্রকাশক পৃষ্ঠার একপাশে কিতাবুত তারাবীহ লিখে রেখেছেন । .. (আরবী) । সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে , এ অধ্যায় দ্বারা সলাতুত তারাবীহ উদ্দেশ্য । আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্য হতে প্রকাশিত সকল বুখারীতে কিতাবুত তারাবীহ বহাল তবিয়তে আছে , যা ছিল ইমাম বুখারীর সংকলিত মূল বুখারীতে ।
আর আধুনিক প্রকাশনী জানি না ইচ্ছাকৃত ভাবে না অনিচ্ছাকৃত ভাবে এই কিতাবুত তারাবীহ নামটি ছেড়ে দিয়ে তৎসংশ্লিষ্ট হাদীস গুলোকে কিতাবুস সাওমে ঢুকিয়ে দিয়েছেন । অনেক স্থানে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল অনুবাদ করেছেন । অনেক স্থানে অধ্যায়ের নাম পরিবর্তন করে ফেলেছেন । কোথাও বা মূল হাদীসকে অনুচ্ছেদে ঢুকিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে , এটা হাদীসের মূল সংকলকের ব্যক্তিগত কথা বা মত । কোথাও বা সহীহ হাদীসের বিপরীতে মাযহাবী মাসআলা সম্বলিত লম্বা লম্বা টিকা লিখে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন । এতে করে সাধারণরা পড়ে গিয়েছেন বিভ্রান্তির মধ্যে । কারণ টিকা গুলো এমনভাবে লেখা হয়েছে যে , সাধারণ পাঠক মনে করবেন টিকাতে যা লেখা হয়েছে সেটাই ঠিক ; আসল তথ্য উদঘাটন করতে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন । আর শাইখুল হাদীস আজিজুল হক সাহেবের বুখারীর অনুবাদের কথাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না । তিনি বুখারীর অনুবাদ করেছেন না প্রতিবাদ করেছেন তা আমাদের বুঝে আসেনা । কারণ তিনি অনুবাদের চেয়ে প্রতিবাদমূলক টিকা লিখাকে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন , যা মূল কিতাবের সাথে একেবারেই সম্পর্কহীন । যে কোন হাদীস গ্রন্থের অনুবাদ করার অধিকার সবার জন্য উন্মুক্ত । কিন্তু সহীহ হাদীসের বিপরীতে অনুবাদে , ব্যাখ্যায় হাদীস বিরোধী কথা বলা জঘন্য অপরাধ ।
এই প্রথমবারের মত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হাদীস নম্বর ও অন্যান্য বহুবিধ বৈশিষ্ট্যসহ সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হল । শুধু তাই নয় , বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই প্রকাশনার মধ্যে যা এ পর্যন্ত প্রকাশিত সহীহুল বুখারীর বঙ্গানুবাদে পাওয়া যাবে না । এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো :
১. আল-মুজামুল মুফাহরাস লি আলফাযিল হাদীস হচ্ছে একটি বিষ্ময়কর হাদীস অভিধান গ্রন্থ । গ্রন্থটিতে আরবি বর্ণমালার ধারা অনুযায়ী কুতুবুত ‍তিসআহ ( বুখারী , মুসলিম , তিরমিযী , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনু মাজাহ , মুসনাদ আহমাদ , মুওয়াত্তা ইমাম মালিক , দারেমী ) নয়টি হাদীস গ্রন্থের শব্দ আনা হয়েছে । যে কোন শব্দের পাশে সেটি কোন কোন হাদীস গ্রন্থে এবং কোন পর্বে বা কোন অধ্যায়ে আছে তা উল্লেখ রয়েছে ।
আমাদের দেশে এ গ্রন্থটি অতটা পরিচিতি লাভ না করলেও বিজ্ঞ আলিমগণ এটির সাথে খুবই পরিচিত । বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের ছাত্র শিক্ষক সবার নিকট বেশ সমাদৃত । অত্র গ্রন্থের হাদীস গুলো আল মুজামুল মুফাহরাসের ক্রমধারা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে । যার ফলে অন্যান্য প্রকাশনার হাদীসের নম্বরের সাথে এর নম্বরের মিল পাওয়া যাবে না । আর এর সর্বমোট হাদীস সংখ্যা হবে ৭৫৬৩ টি । আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৭০৪২ টি । আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস সংখ্যা হচ্ছে ৬৯৪০ টি ।
২. যে সব হাদীস একাধিকবার উল্লেখ হয়েছে অথবা হাদীসের অংশ বিশেষের সংগে মিল রয়েছে সেগুলোর প্রতিটি হাদীসের শেষে পূর্বোল্লিখিত ও পরোল্লিখিত হাদীসের নম্বর যোগ করা হয়েছে । যার ফলে একটি হাদীস বুখারীর কত জায়গায় উল্লেখ আছে বা সে বিষয়ের হাদীস কত জায়গায় রয়েছে তা সহজেই জানা যাবে । আর একই বিষয়ের উপর যাঁরা হাদীস অনুসন্ধান করবেন তাঁরা খুব সহজেই বিষয়ভিত্তিক হাদীস গুলো বের করতে পারবেন । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে :  ( ১০০২ , ১০০৩ , ১৩০০ , ২৮০১ , ২৮১৪ , ৩৯৬৪ , ৩১৭০ , ৪০৮৮ , ৪০৮৯ , ৪০৯০ , ৪০৯১ , ৪০৯২ ,৪০৯৪ , ৪০৯৫ , ৪০৯৬ , ৬৩৯৪ , ৭৩৪১ ) বন্ধনীর হাদীস নম্বর গুলোর মধ্যে ১০০১ নং হাদীসে উল্লিখিত বিষয়ে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ আলোচনা পাওয়া যাবে ।
৩. বুখারীর কোন হাদীসের সঙ্গে সহীহ মুসলিমের কোন হাদীসের মিল থাকলে মুসলিমের পর্ব অধ্যায় ও হাদীস নম্বর প্রতিটি হাদীসের শেষে উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( মুসলিম ৫/৫৪ হা/৬৭৭ ) অর্থাৎ পর্ব নং ৫ , অধ্যায় নং ৫৪ , হাদীস নং ৬৭৭ । সহীহ মুসলিমের হাদীসের যে নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে তা মুজামুল মুফাহরাসের নম্বর তথা ফুয়াদ আব্দুল বাকী নির্ণিত নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
৪. বুখারীর কোন হাদীস যদি মুসনাদ আহমাদের সঙ্গে মিলে তাহলে মুসনাদ আহমাদের হাদীস নম্বর সেই হাদীসের শেষে যোগ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আহমাদ ১৩৬০২ ) এটির নম্বর এহইয়াউত তুরাস আল-ইসলামীর নম্বরের সঙ্গে মিলবে ।
৫. আমাদের দেশে মুদ্রিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আধুনিক প্রকাশনীর হাদীসের ক্রমিক নম্বরে অমিল রয়েছে । তাই প্রতিটি হাদীসের শেষে বন্ধনীর মাধ্যমে সে দুটি প্রকাশনার হাদীস নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে । যেমন ১০০১ নং হাদীস শেষে বন্ধনীর মধ্যে রয়েছে : ( আ.প্র.৯৪২ ই.ফা.৯৪৭ ) অর্থাৎ আধুনিক প্রকাশনীর হাদীস নং ৯৪২ , আর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হাদীস নং ৯৪৭ ।
৬. প্রতিটি অধ্যায়ের ( অনুচ্ছেদ ) ক্রমিক নং এর সঙ্গে কিতারে ( পর্ব ) নম্বরও যুক্ত থাকবে যার ফলে সহজেই বোঝা যাবে এটি কত নম্বর কিতাবের কত নম্বর অধ্যায় । যেমন ১০০১ নং হাদীসের পূর্বে একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যার নম্বর ১৪/৭ অধ্যায় : অর্থাৎ ১৪ নং পর্বের ৭ নং অধ্যায় ।
৭. যারা সহীহ বুখারীর অনুবাদ করতে গিয়ে সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে যঈফ হাদীসকে প্রাধান্য দেয়ার জন্য বা মাযহাবী অন্ধ তাকলীদের কারণে লম্বা লম্বা টিকা লিখেছেন তাদের সে টিকার দলীল ভিত্তিক জবাব দেয়া হয়েছে ।
৮. আরবী নামের বিকৃত বাংলা উচ্চারণ রোধকল্পে প্রায় প্রতিটি আরবী শব্দের বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণের চেষ্টা করা হয়েছে । যেমন : আয়েশা এর পরিবর্তে আয়িশাহ্ , জুম্মা এর পরিবর্তে জুমুআহ্ , নবী এর পরিবর্তে নাবী , রাসূল এর পরিবর্তে রসূল , ম্ক্কা এর পরিবর্তে মাক্কাহ , ইবনে এর পরিবর্তে ইবনু , উম্মে সালমা এর পরিবর্তে উম্মু সালামাহ্ , নামায এর পরিবর্তে সলাত ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচলিত বানানে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ।
৯. সাধারণের পাশাপাশি আলিমগণও যেন এর থেকে উপকৃত হতে পারেন সে জন্য অধ্যায় ভিত্তিক বাংলা সূচি নির্দেশিকার পাশাপাশি আরবী সূচি উল্লেখ করা হয়েছে ।
১০. বুখারীর কত জায়গায় কুরআনের আয়াত এসেছে এমনকি আয়াতের একটি শব্দ আসলেও সেটির সূরার নাম , আয়াত নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে ।
১১. ইনশাআল্লাহ সমৃদ্ধ অধ্যায় ভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা সহ প্রতিটি খন্ডে থাকবে সংক্ষিপ্ত পর্বভিত্তিক বিশেষ সূচি নির্দেশিকা । এতে কোন পর্বে কতটি অধ্যায় ও কতটি হাদীস রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে জানা যাবে ।
১২. হাদীসে কুদসী চিহ্নিত করে হাদীসের নম্বর উল্লেখ ।
১৩. মুতাওয়াতির ১৪. মারফু১৫. মাওকুফ ও ১৬. মাকতু হাদীস নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে । ফলে সে হাদীস গুলোকে সহজেই চিহ্নিত করা যাবে ।
১৭. প্রতিটি খন্ডের শেষে পরবর্তি খন্ডের কিতাব/পর্বভিত্তিক সূচি নির্দেশিকা উল্লেখ করা হয়েছে  ।
শুধু সহীহ বুখারী নয় যে কোন হাদীস গ্রন্থই তাওহীদ পাবলিকেশন্স থেকে কেনার জন্য আমার সু-পরামর্শ থাকলো । কারণ বুখারী মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীস গন্থে কিছু কিছু জাল ও যঈফ হাদীসও রয়েছে । যেগুলোর উপর আমল করা নিষিদ্ধ । একমাত্র তাওহীদ পাবলিকেশন্সই বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী (রহঃ) এর তাহক্বীক্ব করা হাদীস গন্থ এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে । যার উদাহরণ আপনারা এই লিংক থেকে তাহক্বীক্ব রিয়াদুস সালেহীন ডাউনলোড করে দেখুন বুঝতে পারবেন । www.qurqneralo.com
আল্লাহ আমাদের যঈফ ও জাল হাদীস থেকে বাঁচার এবং সহীহ হাদীসের উপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন